ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

থ্রিলারকেও হার মানাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৯

মাহফুজুর রহমান নবিন। বয়স সবে আঠাশের কোঠায়। কিন্তু বয়সের তুলনায় তার ‘কৃতিত্ব’ বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। থ্রিলারকেও হার মানাবে নবিনের সেসব অবিশ্বাস্য প্রতারণার গল্প। তার পেশাই সাইবার অপরাধ। গড়ে তুলেছেন অনলাইনভিত্তিক প্রতারক চক্র। র‌্যাবের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ঘিরেই ছিল তার অপরাধ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি। তার শিকারে পরিণত হয়েছেন খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মীরাও। বাদ যাননি দেশজুড়ে পরিচিত সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী। সাধারণ চাকরিজীবী বা গৃহিণীকেও ছাড়েননি তিনি। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার।

গত বুধবার র‌্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে একটি দল আবদুল্লাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। নবিন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন মোহাম্মদনগর (তিতারকোনা) গ্রামের মৃত ইজাজুর রহমানের ছেলে।

র‌্যাবের সূত্র জানায়, একের পর এক ব্যক্তিকে বেছে নিয়ে ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছেন, ভিডিও ও ছবি জালিয়াতি করেছেন নবিন। র‌্যাব কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন। পর্নগ্রাফি ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চরিত্র হননের মাধ্যমে অকল্পনীয় সব উপায়ে সাইবার অপরাধ ঘটান তিনি।

র‌্যাব সূত্র জানায়, লক্ষ্য হিসেবে নারীদেরই তিনি প্রাধান্য দিতেন। ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর প্রথমে তিনি আইডির মালিককে মানসিক চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আইডিতে থাকা একান্ত ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও, তথ্যাদি বিভিন্ন জনকে পাঠিয়ে দিতে থাকেন। তারপর হ্যাক করা আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন, সম্ভাব্য সব উপায়ে আইডির মালিকের সম্মান বিনষ্ট করা এবং সবশেষে আইডিগুলো ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র প্রতারণার জাল বিস্তার করতেন।

র‌্যাবের দাবি, আটক নবিন অনেক নারীকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়ে অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে তাদের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ও ভিডিও নির্মাণ করতেন। সেগুলো দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। এভাবে তিনি স্বামী-স্ত্রী/প্রেমিক- প্রেমিকার মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতেন। পরিকল্পিতভাবে ভেঙে দিতেন দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ফরমাশ নিয়েও তিনি এই কাজটি করতেন। তার ছবি বিকৃতির তালিকা থেকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বিদেশি সরকারপ্রধানরাও বাদ পড়েননি।

এ ছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে বিষোদ্গার ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তার কাছে নৈমিত্তিক ব্যাপার বলে জানা যায়। র‌্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার উদ্ভাবনী সব প্রতারণা কৌশল এবং ভয়ংকর অপরাধ প্রবণতার কথা জেনে উপস্থিত র‌্যাব কর্মকর্তারাও অবাক হয়ে যান। এ পর্যন্ত র‌্যাবের কর্মকর্তা, টেলিভিশন উপস্থাপিকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে এবং একই নাম ও ছবি ব্যবহার করে আইডি বানিয়ে তাদের ব্যক্তি ইমেজ ব্যবহার করে অভিনব সব উপায়ে সাইবার অপরাধে লিপ্ত হন আটক নবিন। এ ছাড়াও চিত্রনায়িকা মৌসুমী, সংগীতশিল্পী কৌশিক হাসান তাপসসহ আরও অনেকেরই ফেসবুক আইডি হ্যাক করার জন্য তিনি টার্গেট করেছিলেন মর্মেও প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট র‌্যাব কর্মকর্তারা।

পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য আটক নবিনকে হবিগঞ্জের বাহুবল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ব্যবহার, হ্যাক করার চেষ্টা, আইডি বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত করা, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণা করে অর্থ উপার্জন, অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য মন্ত্রী ও বিদেশি সরকারপ্রধান সম্পর্কে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা মন্তব্য করা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিওতে বিভিন্ন জনের মাথা জুড়ে দিয়ে ছবি ও ভিডিও বানিয়ে তা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করা, মোবাইল ও অনলাইনে পর্নগ্রাফিক কনটেন্ট বহন, স্থানান্তর ও ছড়িয়ে দেওয়াসহ সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এএসপি আনোয়ার হোসেন।

এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়েক মাসের নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টায় এই ধূর্ত অপরাধীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। অন্য সাইবার অপরাধীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। ক্রমবর্ধমান এই অপরাধ প্রতিরোধে অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসমূহ ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

 
Electronic Paper