ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তৃতীয় মত

কৃষকের হেঁসেলে পিয়াজ নেই

আবু বকর সিদ্দীক
🕐 ১০:৩১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৯

পিয়াজের কাছে হার মানতে হচ্ছে রথী-মহারথীদের। দামের ঝাঁজ কমছে না, কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। প্রধানমন্ত্রীর রান্নাঘরে পিয়াজ না রাখার ঘোষণাও কোনো কাজে আসেনি। ক্রেতাদের চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে পিয়াজ আমাদের অক্ষমতাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। হাজারটা ইস্যুর ভিড়ে আমরা ঝাপসা চোখে দেখতে পাচ্ছি, কারও কোনো কথাতেই থামছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম।

কৃষি ব্যবস্থার নড়বড়ে চিত্রের সঙ্গে পিয়াজ এখন উপহাস, আমাদের রকেট গতির উন্নয়নের মুখে এক ছোপ কালিমা। ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকের হাহাকার, সন্তানের মমতায় উৎপাদিত আলু, ধান, সবজি রাস্তায় ছিটিয়ে প্রতিবাদ আর হাজার দশেক টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় হাতে হাতকড়া ওঠার দৃশ্য অহরহ। 

প্রকৃতির অমোঘ শিক্ষায় কৃষি আমাদের দেখিয়ে দেয়, এখানে কোনো ছলচাতুরি, ঘুষ-দুর্নীতি চলে না। চারা তৈরি, জমি প্রস্তুত এবং রোপণের পরে পিয়াজকে ঠিকমতো লালন-পালন না করলে সে কিছুতেই ফলন দেবে না। প্রতিটি স্তরে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম ও নিয়ম মানার কঠোরতা রয়েছে। সন্তানের লেখাপড়া, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসা ও এনজিওর কিস্তি দেওয়ার জন্য কৃষক পিয়াজের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করলেও তার যায় আসে না। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বেড়েও উঠবে না, ওজনেও দ্বিগুণ হবে না।

রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ অথবা এক জীবনে হাজার কোটি টাকার গল্প এখন পানসে। ফুলে ফেঁপে বালিশ হয়ে যাওয়া অবৈধ সম্পদশালীদের লজ্জার পর্দাও সরে গেছে। কলমের খোঁচায় অথবা ক্ষমতার দাপটে হাতিয়ে নেওয়া বেপরোয়া অর্থের কাছে কৃষকের ভাগ্য গোয়াল থেকে কাজীর খাতায় জায়গা পেয়েছে।

ফসল সংরক্ষণের নাজুকতায় পিয়াজ আমাদের দীনতাকে প্রকট করে। মাঠ থেকে কৃষানীর উঠানে আসা পিয়াজকে ঘিরে কৃষকের স্বপ্নগুলো গিলে খায় মজুতদার। ব্যবস্থাপনার অভাবে, সাময়িক অভাবকে দূর করতে কৃষক কম শুকনো পিয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়, তখন তা পানির দামে ক্রয় করে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ধার-বাকি শোধ এবং পিয়াজকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে দ্রুত তা বিক্রি করতে বাধ্য হয় কৃষক। টাকাওয়ালা আড়তদার এ সময়টায় গোঁফে তা দেয়, পচে যাওয়ার ভয়, পাওনাদারের তাগাদা আর নতুন ফসলের তাগিদ থেকে কৃষক কম দামে পিয়াজ বিক্রিতে আত্মসমর্পণ করে।

পিয়াজের শরীরের ঝাঁজ এখন মানুষের মগজে। দফায় দফায় রাষ্ট্রের শীর্ষকর্তারা বৈঠক করছেন, টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে আশ্বস্ত করছেন। দু-একটি অভিযানে জরিমানাও করা হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকারিভাবে ট্রাকসেল বা খোলা বাজারে যৎসামান্য রাজধানী, সিটি ও জেলা শহরে বিক্রি হলেও পিয়াজের জনক কৃষকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। স্বেচ্ছা বা মান-অভিমানে নয়, গ্রামের কৃষকের হেঁসেল ঘরে এখন পিয়াজ পাওয়া যায় না।

 
Electronic Paper