ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৫০ বছরের যত্নে গড়া লাইব্রেরি এখন বোঝা

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:১০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

গত ১১ অক্টোবর ‘ব্যক্তিগত বাংলা লাইব্রেরি বিক্রি হবে’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় একটি দৈনিক পত্রিকায়। এক ব্যক্তি প্রায় ৫০ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত লাইব্রেরির বই এবং পত্রিকার সংগ্রহ বিক্রির ঘোষণা দেন সেখানে।

 

 

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭০ সাল থেকে বাংলা বই সংগ্রহ করে চলেছেন বর্তমানে অবসরে যাওয়া স্কুলশিক্ষক গোকুল চন্দ্র দাস। বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকার একটি সরকারি স্কুলে বাংলার শিক্ষক হিসেবে। ছাত্রজীবনে এবং পেশাগত জীবনে লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণে তেমন সমস্যা না হলেও ২০১৪ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকেই লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে তার জন্য।

ষাটোর্ধ্ব এই সংগ্রাহক তার সারা জীবনের সংগ্রহ বিক্রি করে দিতে চাইছেন রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সামলাতে পারছেন না বলে। সেখানে তিনি ‘বিনিময় মূল্য’ ধরেছেন লাইব্রেরির জন্য ১৫ লাখ টাকা এবং পত্রিকার বিশেষ সংখ্যার জন্য ১০ লাখ টাকা। সুবিশাল এই সংগ্রহশালা গড়ে তোলার পেছনের গল্প বলেছেন তিনি। ১৯৭০ সালে দশম শ্রেণিতে থাকার সময় প্রথম বই কেনা শুরু করেন গোকুল চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, সে সময় কিছু কিছু কবিতা লিখতাম। তখন সুযোগ পেলে বিখ্যাত কবিদের কবিতার বই কিনতাম। সেগুলো সংগ্রহ করতে করতে লাইব্রেরি বানানোর বিষয়টি প্রথম মাথায় আসে তার।

বই কেনার ক্ষেত্রে তার প্রাথমিক পছন্দ ছিল কবিতার বই। পরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সংগ্রহ করেন আত্মজীবনীমূলক এবং গবেষণাধর্মী বই। এছাড়াও বাংলা ভাষায় লেখা বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে তার সংগ্রহে। ভারত ও বাংলাদেশের অনেক গবেষকের পিএইচডি থিসিস রয়েছে তার কাছে। এ ছাড়া বানান, বাগধারা, ইতিহাস, ভূগোলের দেড় শতাধিক অভিধানও রয়েছে।

বই ছাড়াও বাংলাদেশে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা সংগ্রহ করছেন তিনি গত ৪৭ বছর ধরে। গোকুল বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে পত্রিকা সংগ্রহ শুরু করি আমি। সে বছর যখন খেয়াল করি যে বিশেষ দিনে- যেমন ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ বা ১৬ই ডিসেম্বর- মূল পত্রিকার সঙ্গে আলাদা একটি অংশ দেওয়া হয় যেগুলোতে বিভিন্ন কবি এবং লেখকদের নানারকম লেখা থাকে। সে সময় আমার মনে হয়, যদি পত্রিকা সংগ্রহ করা শুরু করি, তাহলে একদিন হয়তো আমার সংগ্রহে অনেক লেখকের কবিতা বা রচনা থাকবে। সেই চিন্তা থেকেই পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা সংগ্রহ করা শুরু করি।

চাকরি থাকাকালীন এই শখের লাইব্রেরির রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব একটা কঠিন না হলেও অবসরের পর লাইব্রেরির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাকে। বর্তমানে স্ত্রী ও এক কন্যা নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।

গোকুল বলেন, ‘এমনিতে তিন রুমের একটি বাসা হলেই আমাদের চলে। কিন্তু এই বইগুলো রাখতে হলে একটি আলাদা ঘর প্রয়োজন হয়, যার জন্য বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। অবসরের পর বইয়ের জন্য অতিরিক্ত খরচ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

 
Electronic Paper