ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অভিযোগ
গ্রামে যেতে পারছে না
ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া ৩০০ রোহিঙ্গা এখনও রাখাইনে নিজেদের গ্রামে যেতে পারেনি। সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় নিজের প্রকৃত গ্রামেও তাদের যেতে দিচ্ছে না দেশটির সরকার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বিশেষ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইনু নামের এক রোহিঙ্গা জানান, তিনি ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বালুখালি ক্যাম্প ছেড়ে মিয়ানমার যান। কিন্তু রাখাইনে গেলেও নিজ গ্রামে যেতে পারছেন না তিনি। বহু কষ্টে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করে যাচ্ছেন।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার। বরং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি না হওয়ার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়ও অস্বীকার করে আসছেন তিনি। এমন বাস্তবতায় গত আগস্টে মিয়ানমার সরকার বলেছিল, তারা ৩,৪৫০ রোহিঙ্গাকে ফিরে আসার ব্যাপারে সম্মত। ওই সময় কেউ ফিরে আসেনি। তবে সম্প্রতি ফিরে যাওয়া ২৬ ব্যক্তির কেউ প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী সেখানে যায়নি। দুই দেশের কর্মকর্তারাই বলছেন, তারা রোহিঙ্গাদের তাদের ইচ্ছার ব্যাপারে অবগত করেছেন। তবে ইনু বলেন, আমাদের কেউ জিজ্ঞাসা করেনি যে আমরা মিয়ানমারে ফিরতে চাই না। প্রত্যাবাসন নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
ইনু বলেন, তিনি কিচং গ্রামের প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে কথা বলেই প্রত্যাবাসন শিবির দিয়ে ফিরে আসেন তারা। তার দাবি, প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। নিজে ব্যবস্থা করে ফিরেছেন তিনি।
ইনু ও তার পরিবার অস্থায়ী শিবিরে ছিল না। ফেরার দিনই তাদের মংডুতে নিয়ে গেছে রাখাইন সরকার। কিন্তু তারা নিজ গ্রাম কিচংয়ে ফিরে যেতে চান। কিন্তু তা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে কোনো রোহিঙ্গা থাকে না।
মাহমুদ শারি নামে আরেক রোহিঙ্গা গত বছর মিয়ানমারে ফিরে যান বলে জানিয়েছে রেডিও ফ্রি এশিয়া। তার দাবি, তাকেও প্রত্যাবাসন নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর ক্যাম্পের শরণার্থীরাই শুধু প্রত্যাবাসন চুক্তির ব্যাপারে জানে। কয়েকজন ফিরে আসতে চায় আর কয়েকজন চায় না। তবে যারা গ্রামে ফিরতে চাইছে তাদের ফিরতে দিচ্ছে না মিয়ানমার।
মংডুর পান্তাপিন গ্রামে প্রশাসক আনোয়ার দাবি করেন, রাখাইনে তার গ্রামে কয়েকজন রোহিঙ্গা ফিরে এসেছেন এবং বাসা ভাড়া করে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘গত দুই মাসে কয়েকজন রোহিঙ্গা ফিরে এসেছে। সরকার ১১ জনকে খাবার দিয়েছে। কয়েকজন থাংকি গ্রামের ও কয়েকজন অন্য জায়গার। তাদের এখনও কিছু আত্মীয় এখানে থেকে গেছে, তাই এখানেই বসবাস করতে চাইছে তারা।
মংডুসহ কয়েকটি এলাকায় থাকা রোহিঙ্গারা জানান, তারা এখনও জাতিগত নিধনযজ্ঞের আশঙ্কায় রয়েছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন মিয়ানমারে এখন সেটা সম্ভব না। সিতেতে বাস করা এক রোহিঙ্গা বলেন, আমাদের নির্মূলের জন্য হত্যা করতে হবে না। বরং তারা আমাদের এমন এক জীবনে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে জীবন বলে কিছু নেই আমাদের।
দীর্ঘদিন রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে মিয়ানমার। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরাল করলে জনগোষ্ঠীটির সাত লাখেরও বেশি সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এছাড়াও জনগোষ্ঠীটির অনেক সদস্য নিরাপত্তার আশায় পাচারকারীদের সহায়তায় সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করে থাকে।