ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চেয়েছেন বিচার, পেয়েছেন চাকরি খোঁজার নির্দেশ

সিটি ব্যাংকে যৌন হয়রানি

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯

মনিরা সুলতানা পপি সিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনসহ তিনজনের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন। মনিরা বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে জানালে কোনো প্রতিকার পাননি। সিটি ব্যাংকের ‘যৌন হেনস্তা প্রতিরোধ কমিটি’র প্রধান মাহিয়া জুনদেকে জানালে তিনি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চাকরি খোঁজার নির্দেশ দেন।

এরপর যৌন হেনস্তাকারী সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগকারী মুনিরার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ এনে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। যৌন হেনস্তার শিকার হওয়ার পর বিচার চাওয়ায় একজন নারীর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করার বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ বলে মনে করছেন নারী নেত্রীরা।

এ বিষয়ে আগে যৌন হয়রানির মামলা করার পর ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠান যদি মামলা করে মামলাকারীর চরিত্রহননের চেষ্টা করে তাহলে তা আইনের দৃষ্টিতে খুবই অন্যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, মামলার পর পপির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করা মানে তার বিরুদ্ধে কাউন্টার দিয়ে যৌন হয়রানির বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা করা। যদি তার বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকত তা মামলা করার আগে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল।

মনিরা সুলতানা পপির বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’র প্রধান মাহিয়া জুনেদ কথা বলতে রাজি হননি। মাহিয়া জানান, তার ব্যাংকে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে হয়রানিকারীর বিরুদ্ধে মামলাও আসে। বছরে যৌন হয়রানির ব্যাপারে কতগুলো মামলা আসে-এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনসহ তিন কর্মকর্তা কর্তক যৌন হয়রানির শিকার হওয়া মনিরা সুলতানা পপি কমিটির কাছে কোনো অভিযোগ করেছিল কি না-এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি মাহিয়া জুনেদ।

উচ্চ আদালতের ২০১৯ সালের ১৪ মে উচ্চ এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি বিষয়ক কোনো নীতিমালা হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মরত আছেন, সেখানে যৌন হয়রানি রোধে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। এবং কর্মজীবী নারীদের এ সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে। এ ব্যাপারে নির্দেশনাও দেবে কমিটি। মুনিরা সুলতানা পপি জানান, যৌন হয়রানির ব্যাপারে বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে জানানোর পরও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

এমনি সিটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যাংকটির যৌন প্রতিরোধ কমিটির প্রধান ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মাহিয়া জুনেদকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জানালে অভিযোগের প্রতিকার করার বদলে তাকে সিটি ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে চাকরি খোঁজার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে মন্তব্য চাইলে মাহিয়া জুনেদ খোলা কাগজের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সিটি ব্যাংকের সাবেক এই নারী কর্মী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে ১৯ আগস্ট গুলশান থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য দুই আসামি আমাকে অব্যাহতভাবে ইভ টিজিং করেন। তাদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাদি আরও উল্লেখ করেন, এ তিন কর্মকর্তার কুরুচিপূর্ণ আচরণের বিষয়টি বহু আগে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানানো হলেও কোনো ফল পাইনি। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। মামলাটি করা হয়েছে দণ্ডবিধির ৪০৬/৫০৬ ধারায়। যেখানে শ্লীলতাহানি ও শ্লীলতাহানিতে সহায়তা প্রদান করা এবং অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকি প্রদর্শনের অপরাধের কথা বলা আছে।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ব্যাংকে যোগদান করার পরপরই মাসরুর আরেফিনের নিয়মিত ইভ টিজিংয়ের শিকার হন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় এমডির এসব আচরণ সহ্য করেই তাকে কাজ করতে হয়। ২০১১ সালে অপর আসামি হেড অব সিএসআরএম আবদুল ওয়াদুদ গাড়িতে লিফট দেওয়ার নাম করে তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসেন। লিফটের ভেতরে, সিঁড়িতে অফিস চলাকালীন তার হয়রানির শিকার হতে হয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে শুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান খোলা কাগজকে বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছু বলা যাবে না।

 
Electronic Paper