পৃথিবী বাঁচাতে পথে রাজধানীর শিশুরাও
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মতো রাজধানী ঢাকায়ও তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দাবি জানিয়ে মিছিল করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক সুইডিশ কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গের (১৬) ডাকে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ শিশু ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ বা ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ নামের এই আয়োজনে অংশ নেয়।
বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর অনেক দেশে টানা এক সপ্তাহ চলবে পরিবেশবাদী এই আন্দোলন। বিবিসি বাংলা অনলাইন এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে গতকাল রাজধানী ঢাকার প্রায় ৩৫টি স্কুল থেকে নানান রঙের পোশাক পরা কিশোর-কিশোরীরা জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই র্যালিতে তারা জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে স্লোগান দেয়। ‘একটাই পৃথিবী একটাই সুযোগ’; এ জাতীয় লেখাসহ অনেক প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা র্যালিতে যোগ দেয়। তাদের স্লোগানের মূল কথা হলো- ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’ বা ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার’। শিক্ষার্থীরা জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব এখনই পৃথিবীর মানুষের ওপরে পড়ছে, ঝড়-বন্যা-দাবানল-খরা যেভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, সেগুলো ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আজকের শিশুরাই। সে কারণে নিজেদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় বড়দের প্রতি আহ্বান জানায় জলবায়ু রক্ষার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছেলেমেয়েরা।
মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বড়রা এই যে গাছপালা কেটে কলকারখানা আর বাসস্থান বানাচ্ছে, তাদের দোষের কারণে আমাদের ভুগতে হবে। আমরা সমাজে টিকতে পারব না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও টিকে থাকতে পারবে না। বড়রা অনেক ভুল করেছে এবং এখনো ভুল করেই যাচ্ছে। যার ফল হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বায়ুম-লের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ।’
মিরপুরে বিসিআইসি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া ফায়জা কণিকা বলেন, ‘আমরাই পরবর্তী প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যতে থাকব। পরিবেশের যা অবস্থা, সেটা আমাদেরই সহ্য করতে হবে। তাই নিজেদের ভালোর জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে। বড়রা আমাদের কথা ভাবছেন না এবং তারা স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন।’
এদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বনেতারা আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে বসছেন; কিন্তু অনেক গুরুতর বিষয়েই তারা একমত হতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী দেশও জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস চুক্তি থেকে সরে গেছে। তাহলে এই শিশুদের কথা কে কতটা শুনবেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রেটা থানবার্গের কথা উল্লেখ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গ্রেটা থানবার্গের জন্য আজকে আমরা সবাই এখানে এসেছি। হয়তো আমি আপনাকে বললে আপনি কিছু পরিবর্তন করবেন না। কিন্তু আমরা সবাই যদি বলি তাহলে আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করবেন যে, এখন আমার পরিবর্তন হওয়ার সময় আসছে।’
প্রসঙ্গত, ১৬ বছর বয়সী সুইডেনের গ্রেটা থানবার্গ প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গত বছর থেকে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। প্রতি শুক্রবার সে সুইডেনের পার্লামেন্টের বাইরে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর দ্য ক্লাইমেট’ কথাটি লিখে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে বসে থাকত। এ থেকেই সে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। তারই ডাকে গতকাল বিশ্বের নানা দেশে লাখ লাখ শিশু এই আয়োজনে অংশ নেয়।
পৃথিবীর প্রায় পাঁচ হাজার স্থানে সপ্তাহব্যাপী চলবে এই আন্দোলন
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের শুধু নিউইয়র্ক শহরেই দশ লাখেরও বেশি শিশুকে স্কুল বাদ দিয়ে এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। গ্রেটা থানবার্গ নিজেও নিউইয়র্কের সমাবেশে অংশ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রথম এই মিছিল শুরু হয়। বিভিন্ন দেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বিশ্বের পাঁচ হাজারেরও বেশি স্থানে এই আন্দোলন অংশ নেবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
গতকাল প্রথম দিনেই সিডনি থেকে শুরু করে সিউল ও সাও পাওলো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশু-কিশোররা তাদের পাঠ্যবই বন্ধ রেখে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লাইমেটস্ট্রাইক হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনকে বলা হচ্ছে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’। নিউইয়র্ক শহরের ১৮০০টি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বাদ দিয়ে এই মিছিলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিন শিশু-কিশোররা নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বড়দের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।