ইলিশ নিয়ে বিভ্রান্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯
ভরা মৌসুমে রাজধানীর বাজারে প্রচুর ইলিশ মিললেও জাতীয় মাছের উৎপাদনের পরিমাণ, দাম ও প্রাপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। অনেকে বলছেন বাজারে প্রচুর ইলিশ থাকলেও দাম চড়া। আবার অনেকে বলছেন ছোট সাইজের ইলিশের দাম ঠিক আছে, তবে বড় ইলিশের দাম একটু বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বড় সাইজের ইলিশের সরবরাহ ২০ শতাংশ বেড়েছে মৎস্য অধিদফতর থেকে এমনটা দাবি করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- বড় ইলিশের সরবরাহ যদি গত বছরের চেয়ে এবার ২০ শতাংশ বাড়ে, তাহলে বড় ইলিশের দাম এত বেশি কেন। নাকি মৎস্য অধিদফতরের তথ্যে ঘাপলা আছে। বাজারে ইলিশের দাম চড়া থাকায় ইলিশের উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা নিয়েও জনমনে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর বাজারগুলোয় পর্যাপ্ত ইলিশ দেখা গেলেও দেশের অধিকাংশ জেলা শহরে পর্যাপ্ত ইলিশ মিলছে না। বড় ইলিশের দাম আকাশচুম্বির নেপথ্যে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, বাজারে বড় ইলিশের চাহিদা বেশি। তাই সিন্ডিকেটের সদস্যরা পাইকারদের মাধ্যমে বড় ইলিশ আলাদা করে দাম বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে বড় ইলিশের দাম ছোট ইলিশের দামের চেয়ে অনেক বেশি।
বর্তমান সময়টি হচ্ছে ইলিশের ভরা মৌসুম। চাঁদপুরের জেলেরা দিন রাত পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরতে ব্যস্ত। জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। পটুয়াখালীর খেপুপাড়া, বরগুনার পাথরঘাটা ও কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন স্থানে সাগর থেকে জেলেরা শত শত ট্রলারে বোঝাই করে প্রতিদিন মাছ নিয়ে তীরে আসছেন। কিন্তু তারপরও দেশের সব জেলার বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ মিলছে না। যদিও বলা হচ্ছে এ বছর প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি। তাহলে ইলিশ যায় কোথায়!
ইলিশ যে সব এলাকায় পর্যাপ্ত ধরা পড়ছে তা কিন্তু নয়। চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাটের কয়েক জেলে জানান, ইলিশ ধরার জন্য জীবনবাজি রেখে দুই সপ্তাহ আগে তারা গভীর সমুদ্রে গিয়েছিলেন। নৌকাভর্তি ইলিশ মাছ ধরে রাজ্যের সব আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। পরিবারের সবাই তাদের অপেক্ষায়। কিন্তু ওই সময় তাদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার চিহ্ন। নৌকার একজন মালিক বলেন, ‘ইলিশ ধরার জন্য ঋণ নিয়ে তিনটি নতুন জাল কিনে সমুদ্রে ফেলেছিলাম। কিন্তু বিধি বাম! সামান্য ইলিশ মাছ নিয়ে হতাশায় বাড়ি ফিরতে হলো। এই হলো ইলিশ মৌসুমে চট্টগ্রামের স্থানীয় জেলেদের চিত্র। তাছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও জেলেদের অভিযোগ- মহাজন, ফড়িয়া ও দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে ইলিশ যা পাচ্ছে তারও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।’
এদিকে ভোলা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনার জেলেরা জানান, তাদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর রুপালি ইলিশ। এতে জমজমাট হয়ে উঠেছে মাছের আড়তগুলো। জেলে, আড়তদার ও পাইকারদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে মাছঘাটগুলো। দেরিতে হলেও নদীতে মাছ ধরা পড়ায় তাই হাসি ফুটে উঠছে জেলেদের মুখে। মাছ বিক্রির টাকায় লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী জেলে পরিবারগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারওয়ানবাজারে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। দেড় থেকে এক কেজি ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক কেজি থেকে এক কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। এক কেজি ওজনের ইলিশ এ বছর হাজার টাকার নিচে নামেনি। গত বছরের চেয়ে এ বছর বড় ইলিশের জোগান যদিও ২০ ভাগ বেড়েছে, কিন্তু দাম কমছে না। বাজারে ইলিশের দাপটের কারণে অন্য মাছের উপস্থিতি কম। যে কারণে বাজারে অন্য মাছের দাম একটু বেশি।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৭ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান দিলদার আহমদ গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, এখানে বিভ্রান্তির কিছু নেই। সব জিনিসেরই দাম কিন্তু বেশি। তাই ইলিশের দামও একটু বেশি। যে সাইজের মাছের চাহিদা বেশি থাকবে সে সাইজের মাছের দাম একটু বেশি থাকা স্বাভাবিক।