ডিসেম্বরে দুই সিটি নির্বাচন
নতুন মুখ খুঁজছে আ.লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৯
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেইসঙ্গে প্রস্তুতি চলছে রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যেও। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সিটি নির্বাচনে লড়বার জন্য এবার বেশ কয়েকজন নতুন মুখের নাম উঠে এসেছে যারা এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল একসঙ্গে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল।
এরপর ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে এবং চট্টগ্রাম সিটিতে প্রথম সভা হয় ওই বছরের ৬ আগস্ট। সে হিসাবে ঢাকা উত্তরের ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে আর দক্ষিণে ১৬ মে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিন আগে যে কোনো সময় ভোট করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কোনো কারণে ডিসেম্বরে এ নির্বাচন করা না গেলে আগামী বছরের ১৭ মার্চের আগেই ভোট হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ পালনের সুবিধার্থে এমন চিন্তা-ভাবনা করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসির নির্বাচন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে সরকার ও দলের হাইকমান্ডও চাইছে, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালনে ঢাকার দুই সিটি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত থাকুক। সে অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে দুই সিটির নতুন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, যোগ্য, দাপুটে ও জনসম্পৃক্ত এসব তরুণ মুখের কারণে উত্তর ও দক্ষিণের বর্তমান মেয়র যথাক্রমে আতিকুল ইসলাম ও সাঈদ খোকনের পুনঃমনোনয়ন কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। দলের হাই কমান্ডের একাধিক সূত্র বলছে, জনগণের ভাষা বোঝেন এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ়-এমন নেতাদেরই এবার সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। এবার ডেঙ্গু ইস্যুতে দুই সিটির চরম ব্যর্থতা প্রতীয়মান হয়েছে। আগাম সতর্কতা পেয়েও ব্যবস্থা না নেওয়া, ভেজাল ওষুধ ছিটানো এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবকে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নাগরিকরা ভালোভাবে নেয়নি।
এক্ষেত্রে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের ওপর নাগরিকদের ক্ষোভ বেশি। মেয়াদের শেষ সময়ে এসে মেয়র হওয়ায় উত্তর সিটির আতিকুল ইসলাম পরিস্থিতি তেমন একটা বুঝতে পারেননি। ফলে ডেঙ্গু ইস্যুতে কিছুটা ছাড় পেয়ে যেতে পারেন তিনি। তারপরও ঝুঁকি রয়েছে। কারণ আগামী নির্বাচনে এই দুজনের চেয়ে যোগ্য ও জনসম্পৃক্ত প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবে। এরই মধ্যে প্রবীণ ও নবীন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের হাইকমান্ডদের সঙ্গে নানা লবিং বা তদবির শুরু করেছেন। তবে দুই সিটি নির্বাচনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে তরুণ নেতারা।
আওয়ামী লীগ যে দলীয়ভাবে দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে চাইছে তা বোঝা গেছে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায়। গত শনিবার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, দুই সিটির নির্বাচন বাকি আর কয়েক মাস।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, দল ক্ষমতায় আছে বলে ক্ষমতার দাপট বা প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনে জিতে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সাফ বলে দিয়েছেন, জনগণকে খুশি করে তাদের রায় মেনে আমরা নির্বাচিত হতে চাই। ফলে এটা ভাবার সুযোগ নেই যে নির্বাচনে দাঁড়ালেই জিতে যাওয়া যাবে। এজন্য মানুষের মাঝে কাজ করতে হবে, মানুষকে সঙ্গে নিতে হবে। দলও সেসব প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে যাদের জনপ্রিয়তা আছে, সামাজিক অবস্থান ভালো, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো, স্থানীয় ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে।
যদি দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তনের কথা ভাবে তবে উত্তর থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন, সাবেক মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ব্যবসায়ী আদম তমিজী হক। আর দক্ষিণে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট প্রমুখ। এছাড়া গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও মনোনয়নের বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।
মনোনয়নের দৌড়ে যতই নতুন-পুরাতন মুখের চাপ বাড়ুক, দক্ষিণের মেয়র খোকন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন পুনঃমনোনয়ন নিশ্চিত করতে। কারণ তিনি আশা ছাড়ছেন না। শেষ সময়ে ডেঙ্গু ইস্যু ছাড়া নগরীর নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মতো বিভিন্ন উদ্যোগে তিনি মোটামুটি সাফল্য দেখিয়েছেন। উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে যৌথ কয়েকটি উদ্যোগে সাঈদ খোকন আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সে সময়ে নেওয়া অনেক কল্যাণমূলক কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম যেহেতু পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, সে কারণে আবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে তার তেমন একটা বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছেন কেউ কেউ।