ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

৩৫৪০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার, একফোঁটা শিশির

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৯

বিতাড়নের পাক্কা দুই বছর পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দুয়ার খোলার কিছুটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য আগামী ২২ আগস্ট দিন ঠিক করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরুর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা ফেরাতে প্রত্যাবাসন চুক্তি সই হয়েছিল। এ চুক্তির পর নানা টালবাহানায় মিয়ানমার বারবার পিছিয়েছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। চুক্তির প্রায় ২০ মাস পর রোহিঙ্গা ফেরানোর সূচনা হতে চললেও সেটা কতটা সফল হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেননা, নতুন আসা সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মিয়ানমার প্রথম দফা ফেরাতে চাইছে ৩ হাজার ৫৪০ জনকে।

মিয়ানমারের এই উদ্যোগ কতটা সদিচ্ছা আর কতটা বিশ্বকে দেখানো তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কূটনীতিকরা মনে করছেন, দুই বছর পর নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার যে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে তাতে নিজেদের দূরভিসন্ধি থাকাটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক চাপ বিশেষ করে চীনের কারণে এ প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। নামমাত্র কয়েকজনকে ফিরিয়ে নিয়ে তারা দেখাতে চায় রোহিঙ্গাদের নিতে তারা আন্তরিক। কিন্তু আগে-পরে মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে নিজেদের যাওয়ার পরিবেশ ও নিরাপত্তা পেলেই তারা সেখানে ফিরতে চায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের এ মনোভাবের কথা ভালো করেই জানে। তাই যে ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার কথা তারা বলছে তা আদৌ সফল হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। আর তালিকা অনুযায়ী রোহিঙ্গারা রাখাইনে গেলেও বাস্তবিক সংকটের তুলনায় এ উদ্যোগ খুবই ক্ষুদ্র। তাই সংশয় থেকেই যায় শেষে এ প্রত্যাবাসন শৈবাল আর দীঘির মতো হবে না তো। একফোঁটা শিশির দিয়ে শির উঁচু করে বলবে না তো, ‘লিখে রেখ দিলেম এক ফোঁটা শিশির’।

মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ২২ আগস্ট সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও নাগরিকত্বের স্বীকৃতির নিশ্চয়তা না পেলে রোহিঙ্গারা যেতে চায় না বলে এই দফার চেষ্টা ফলপ্রসূ হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ দিলেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে না। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে পরবর্তী সময়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতিও নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ঝুলে যায়।

এরপর গত মাসে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে প্রত্যাবাসন চুক্তির অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মিয়ানমারের হাতে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার নতুন একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিন্ট থু রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা ৩ হাজার ৫৪০ জনকে আগামী ২২ আগস্ট ফেরত নিতে রাজি।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, এটা প্রত্যাবাসনের ছোট আকারের একটি পরিকল্পনা। তবে রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ফেরত পাঠানো হবে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যেন স্বেচ্ছায়, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে হয় এবং তা যেন টেকসই হয়।’

গত মাসে ঢাকায় কয়েক দফা বৈঠকের পর মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে গিয়ে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের ৩৫ জনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুদফা বৈঠক করেন। সে সময় রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা বলেন, তারা আগে নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা চান। এদিকে জাতিসংঘসহ প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, প্রত্যাবাসন হতে হবে রোহিঙ্গাদের স্ব-ইচ্ছায়। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের অভ্যন্তরীণ একটি ই-মেইলের সূত্র ধরে রয়টার্স, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি কী, তা রোহিঙ্গাদের কাছে তুলে ধরবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা।

 

 
Electronic Paper