ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গণপিটুনি ঠেকাতে হার্ডলাইনে সরকার, গ্রেফতার শতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯

‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। নিহতের মধ্যে অধিকাংশই মানসিক ভারসাম্যহীন, বাক প্রতিবন্ধী ও নারী। এ সুযোগে প্রতিপক্ষকে কৌশলে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে গণপিটুনিতে জড়িত সন্দেহে শতাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েকজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে।’

সরকারি বিবৃতিতেও ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এসপিদের কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে গুজব ঠেকাতে কাজ শুরু করছে আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য।

সবমিলিয়ে সরকার নির্মম এ হত্যাকা- ঠেকাতে মরিয়া মনোভাব নিয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশনায় তৃণমূল পর্যন্ত মনিটরিং ও সচেতনতা সৃষ্টির কাজ চলছে।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ছেলেধরার গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে। গুজব রটনাকারীরা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই এসব করছে। এগুলোর নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা বসে নেই, সব ঘটনাকে সামনে এনে, ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৯টি, জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়েছে ১৫টি। ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, যারা ফেসবুকে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করে অ্যারেস্ট করেছি। এসব মামলা দ্রুত মামলাগুলোর চার্জশিট দিয়ে দেব। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থাও নেব।

এর আগে গত সোমবার সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক গুজব ছড়িয়ে ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষ পিটিয়ে হতাহত করছে। এটা গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।

এদিকে গণপিটুনিতে জড়িত সন্দেহে অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু হত্যার মামলায় গ্রেফতার সাত আসামির মধ্যে ব্যক্তি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনজনকে চার দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এ হত্যার মূল আসামি হৃদয়কে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

ধামরাইয়ে এক প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত সন্দেহে এক দম্পতিসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম, তার স্ত্রী রোজিনা বেগম, ফরহাদ, জিয়া, সহিদ ও সাইজুদ্দিন। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় মামলাও দায়ের হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় গতকাল ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। গত সোমবার চারজনকে গণপিটুনির দায়ের তাদের আটক করে আদালতে নেওয়া হয়। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এছাড়া ঢাকার কেরানীগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অন্তত ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিদের আটকে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

এদিকে গুজব রোধে আনসার ভিডিপি বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণসচেতনতামলূক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। জেলায় জেলায় পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। মাইকিং করা হচ্ছে, ফেসবুক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মসজিদে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি কঠোর আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে ‘পদ্মা সেতুতে এক লাখ মাথা লাগবে’ মর্মে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে তুবা, খুঁজছে মাকে
রাজধানীর বাড্ডায় গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর থানার সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। নিহত রেনুর শিশুকন্যা তুবাসহ পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিল তুবা। মানববন্ধনে উপস্থিত লোকজনের মাঝে মাকে খুঁজছিল সে।

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রায়পুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া, রায়পুর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক তানজিদ কামাল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জহির পাটওয়ারী, ফ্রেন্ডস ফোরামের সভাপতি তুহিন চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক আজিজ জনি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘ছেলেধরা গুজবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানসিক প্রতিবন্ধী ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যারা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যারা গুজব ছড়িয়ে রেনুকে হত্যা করেছে তাদের বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ জরুরি।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মেয়েকে ভর্তির জন্য ওই স্কুলে খোঁজ নিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত হন তিনি।

 

 
Electronic Paper