ডেঙ্গু পরিস্থিতি
জ্বর হলেই দেখাতে হবে ডাক্তার
২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩ জন হাসপাতালে
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০১৯
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৩ জন। গতকাল পর্যন্ত চলতি জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৬৩৭ জন। আর এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৬৫২ জন। চলতি জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ২৪৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।
কন্ট্রোল রুম সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৯ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৩জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫২ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৫ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৫ জন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ১৫ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১২৯ জনসহ ঢাকা শহরে ৪৭৩ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৮২৩ জন। বিজিবি হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছে ১৬ জন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭২ জন।
রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গুর ধরন ও ভয়াবহতা অনেক বেশি। এ কারণে হাসপাতালে নিশ্চিত ডেঙ্গু রোগ নিয়ে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের ক্লিনিক্যাল নমুনা ও উপসর্গ কী ধরনের, ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ফলে তাদের কোনো কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ (কিডনি, লিভার, হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ) কতটুকু সময়ের মধ্যে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে, রক্তে প্ল্যাটিলেটের পরিমাণ কত, আগের ক্লিনিক্যাল গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করে উন্নতি হচ্ছে কি-না, ইত্যাদি সম্পর্কে প্রতিটি রোগীর তথ্য-উপাত্ত সঠিকভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং তা নিয়ে ব্যাপকভাবে তথ্যভিত্তিক গবেষণা করা প্রয়োজন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, হাসপাতাল থেকে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সঠিক উপায়ে সংগ্রহ এবং তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে না। ফলে প্রথমদিন থেকেই রোগীকে কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে- সে সম্পর্কে চিকিৎসকরা ভালোভাবে অবহিত নন। এছাড়া নিয়মিত তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বহু হাসপাতালের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে- এ কথা সত্যি। কিন্তু দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে তা খুব বেশি নয়। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা মৃত্যু কারও কাম্য নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমানে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক রোগতত্ত্ববিদ ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল দেখে এবং ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হলো, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ও ভয়াবহতা বেশি। আগে যেমন ডেঙ্গু হলে ৩/৪ দিন পর থেকে গায়ে র্যাশ ওঠা, দাঁত দিয়ে রক্তপড়াসহ কিছু নমুনা বোঝা যেত। কিন্তু গত বছর থেকে ডেঙ্গুর নতুন প্যাটার্নের কারণে রোগী দ্রুত কোমায় পর্যন্ত চলে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের কেস হিস্ট্রি সংগ্রহ করে, গবেষণা করে কী ধরনের ডেঙ্গু (স্ট্রেইন বা সেরো টাইপ), এতে চিকিৎসা কী হবে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। তবে জ্বর হলে ঘরে বসে না থেকে রোগীকে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন ড. রহমান।