দুধ নিয়ে বাকৃবি গবেষকদের ভাষ্য
ঝুঁকি নেই সহনীয় অ্যান্টিবায়োটিকে
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
🕐 ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০১৯
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নেপথ্যের মৌলিক বিষয় ও করণীয় সম্পর্কে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পালন অনুষদের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। প্রতিবেদনে বলা হয় দুধে স্বভাবতই কিছু ব্যাকটেরিয়া বা নানা কারণে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা বিভিন্ন ধাতুর উপস্থিতির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। ফলে দুধে ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক সহনীয় মাত্রায় থাকলেও ক্ষতি কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় বাকৃবির সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান।
এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির পশু পালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অঞ্চল ও পরিবেশভেদে এবং গবাদিপশুর খাদ্যাভ্যাসের ওপর দুধে কী পরিমাণ জীবাণুর উপস্থিতি থাকবে, তা নির্ভর করে। দুধের এ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে ও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করে গবেষণার ফল প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় জনমনে বিভ্রান্তি ও শঙ্কার সৃষ্টি হবে, যা মধ্যম আয়ের দেশে দুগ্ধশিল্পের মতো ক্রমবিকাশমান একটি শিল্পের জন্য মোটেই সুখকর নয়। মানুষ ফল-সবজিতে ফরমালিনের উপস্থিতির মতো অযথা আতঙ্কিত হবে। পুষ্টিকর দুধ খাওয়া কমিয়ে দেবে এবং দুগ্ধশিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ গবেষক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মো. নূরুল ইসলাম আরও বলেন, দুগ্ধজাত পণ্যে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দইয়ে থাকে উপকারী ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া। দই ও ফার্মেন্টেড (গাঁজন) দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যে ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্য সেখানেও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চলে আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত না করে মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে দইকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা যাবে না। কাঁচা তরল দুধে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকা খুবই স্বাভাবিক। পাস্তুরায়ণের মূল উদ্দেশ্য হলো, প্যাথজেনিক (রোগ সৃষ্টিকারী) ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণভাবে মেরে ফেলা।
চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে তিনি বলেন, গবাদিপশুর চিকিৎসা কিংবা রোগ প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে গাভীর শরীর পুরোপুরি মাত্রায় তা শোষণ করতে পারে না। এ কারণে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক মলমূত্রের সঙ্গে এবং কিছু দুধের মধ্যে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে গাভীকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে বিশেষ সতর্কতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেবল সহনীয় মাত্রার বেশি পাওয়া গেলেই তা খাবার অনুপযোগী বলে গণ্য হবে বলে মন্তব্য করেন এ শিক্ষক।