ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঈদযাত্রা মলিন হবে সংযোগ সড়কে

রহমান মুফিজ
🕐 ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০১৯

সম্প্রসারণ, সংস্কার এবং ব্যবস্থাপনায় মনোযোগী হওয়ায় মহাসড়কগুলোতে যানজট অনেকটাই কমেছে। গত ঈদুল ফিতরে উত্তরবঙ্গ বাদে ঢাকা থেকে মহাসড়ক ধরে অন্যান্য অঞ্চলে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি অন্যবারের চেয়ে কম ছিল। তবে আঞ্চলিক সড়ক বা সংযোগ সড়কে ভোগান্তি সঙ্গী ছিল মানুষের। আগামী ১১ আগস্ট ঈদুল আজহা ধরে এবার বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে ২৬ জুলাই থেকে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যাচ্ছে, এবারে ঈদযাত্রায় বাগড়া বসাবে বৃষ্টি ও বন্যা। এ ক্ষেত্রে মহাসড়ক স্বস্তি দিলেও ঈদযাত্রা মলিন হতে পারে সংযোগ সড়কে। কেননা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানাচ্ছে, দেশে বর্তমানে ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে চলাচল অযোগ্য ১ হাজার কিলোমিটার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়কগুলো অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ২০১৭ সালের বন্যার কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়া সড়কগুলোর অধিকাংশ স্থায়ীভাবে সংস্কার হয়নি। ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বারবারই জোড়াতালি লাগিয়ে এসব সড়ক অস্থায়ীভাবে চলাচল উপযোগী করা হয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই ফের খানাখন্দে ভরে ওঠে সড়কগুলো। এসব সড়ক সংযুক্ত হয়েছে জাতীয় মহাসড়কে। ফলে যখন মহাসড়কে পরিবহনের চাপ বাড়ে তখন আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলোতেও একই রকম চাপ সৃষ্টি হয়। বেড়ে যায় যানজট। এর ওপর সড়কে কোরবানির হাট যদি বসে তাহলে ভোগান্তি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। ঈদযাত্রার বাকি আর মাত্র ২০ দিন। এখন থেকেই যদি সতর্ক অবস্থান না নেওয়া হয় তবে ঈদে ঘরফেরত মানুষের যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক ও সংযোগ সড়কগুলোতে যানজট বলবৎ রেখে মহাসড়ক নির্বিঘ্ন করে কোনো লাভ হবে না। মানুষের ঘরে ফেরা অবাধ ও নির্বিঘ্ন করতে হলে মহাসড়কের পাশাপাশি আঞ্চলিক সংযোগ সড়কগুলো সংস্কারের দিকেও নজর দিতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে মহাসড়কের চেয়ে ৭ গুণ বেশি আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক। এসব সড়কেই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় সাধারণ মানুষকে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্যমতো তাদের অধীনে দেশে মোট সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৮১২ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৪৬ কিলোমিটার এবং জেলা সড়ক রয়েছে ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৫২ কিলোমিটার রাস্তা জরিপ করে জানিয়েছে, ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে চলাচল অযোগ্য রয়েছে ১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি সড়ক।

সওজ সূত্রমতে দেশে ৬৬টি জাতীয় মহাসড়ক, ১২১টি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ৬৩৩টি জেলা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়কে ৮টি রুট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এগুলো হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল রুট। এসব রুটের মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে শত শত আঞ্চলিক মহাসড়ক।

এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে মাওনা-শ্রীপুর, বর্মীবাজার, ফুলবাড়িয়া-কালিয়াকৈর সড়ক। ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে সংযুক্ত রয়েছে নবীনগর-চন্দ্রা, টাঙ্গাইলে এলেঙ্গা অংশে কালিহাতি, নগরবাড়ি, সিরাজগঞ্জে বগুড়া, নাটোর, রাজশাহীর সংযোগ সড়ক, বগুড়ার মাটিডালি বাসস্ট্যান্ড থেকে সান্তাহার ও গাইবান্ধার সংযোগ সড়ক, রংপুর মেডিকেল মোড় থেকে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সংযুক্ত মহাসড়ক রয়েছে। এছাড়া নাটোর বাইপাস মোড় থেকে পাবনা-কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী সংযোগ সড়কগুলো অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লার হোমনা, ময়নামতি, বিজয়পুর, ফেনী নোয়াখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, বান্দরবান সংযোগ সড়ক, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে একদিকে মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ আরেকদিকে রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা সংযোগ সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, শায়েস্তাগঞ্জ, বানিয়াচং, ইনাতগঞ্জের সংযোগ সড়কগুলোকে প্রতি ঈদেই অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়। গত কয়েকটি ঈদে সংযোগ সড়কের যানজটের প্রভাবে মহাসড়কগুলোতেও ভয়াবহ যানজট লাগার নজির রয়েছে। এসব সড়ককে অচল রেখে মহাসড়ক সচল করে মানুষের বাড়িফেরা কোনোভাবেই নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়াক করা যাবে না বলেই মনে করেন সড়ক-যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, মহাসড়ক থেকে এসব সড়কে ঢুকতে গেলেই পরিবহনগুলোকে ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়তে হয়। কারণ সড়কগুলো সরু এবং অধিকাংশই খানাখন্দে ভরা। এবার বৃষ্টির মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিলে এসব সড়ক চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এমনিতেই গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় এসব রাস্তা ইতোমধ্যেই নাজুক হয়ে উঠেছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার বিস্তৃত সড়ক। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। তখন শুধু আঞ্চলিক বা জেলা সড়ক নয় মহাসড়কও অবরুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে বৃষ্টি মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া দৌলতদিয়া সেতু পারাপারও। আবহাওয়া বিরূপ হয়ে উঠলে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রীদের পড়তে হবে মহাভোগান্তিতে। এর মধ্যে যদি মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গরুর হাটের অনুমোদন দেওয়া হয় তবে ভোগান্তির আর একশেষ থাকবে না।

এরপরও এ রকম শত ভোগান্তির আশঙ্কা নিয়েই কোরবানির ঈদে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকাবাসী। গতকাল মঙ্গলবার বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ২৬ জুলাই থেকে বাসের এবং ২৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগামী ১১ আগস্ট সম্ভাব্য ঈদ ধরে অগ্রিম টিকিট বিক্রির এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 
Electronic Paper