রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু
১৫ দিনে হাসপাতালে আড়াই হাজার
সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০১৯
ঢাকায় আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ (১৫ জুলাই) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ২১৪ জন। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩১৮ জন। আর চলতি মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৬৬ জন। শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত রোববার একদিনে ভর্তি হয়েছেন ৭০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, জুলাই মাস ডেঙ্গু বিস্তারে উপযুক্ত সময়। চলতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বেড়েই চলছে। প্রতিদিন এই সংখ্যা প্রায় দুশত। এছাড়া বহির্বিভাগ থেকেও চিকিৎসা নিয়ে অনেকে বাসায় যাচ্ছেন। চাপ সামলাতে এখন অনেকটাই বেহাল দশায় চিকিৎসকরা। চলতি বছর এরই মধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৫৪৯ জন। যার মধ্যে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪৬৬ জন। বর্তমানে ১ হাজার ৭৫ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য রাজধানীবাসী নগর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন সময়মতো দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পল্লবী, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, নতুন বাজার, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, গুলশান, বারিধারায় সবচেয়ে বেশি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানীকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হলেও দেশেব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ে নেই কোনো কার্যক্রম। এর ফাকে রাজধানীর পেরিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ডেঙ্গুতে এবছর মারা গেছেন ৩ জন। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। গত ১৩ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবছর ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যুর খবরে কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেছেন- ঢাকা মেডিকেলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে। এই হসপাতালে বর্তমানে ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত রোববার ৭০ জনের মতো রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে একজন ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এখানকার ডাক্তাররা খুবই দক্ষ। রোগীদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ডেঙ্গু শিগগিরই কোনো রোগী মারা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে একজন বয়স্ক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখানে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর এখানে আসছে। সুতরাং যারা এখানে ভর্তি হচ্ছেন তাদের অবস্থা একটু জটিল বলা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি উঠছে না। কিন্তু দুই-তিন দিনের মধ্যে রক্তের প্লাটিলেট কমে হেমোরেজিকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫-৬ দিন থাকে এবং তারপর ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে অনেক রোগী এমনকি ডাক্তারও মনে করেন রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময়ই প্লাটিলেট কমে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী সময়টাকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময় সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
শুধু ঢাকা নয়, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর ও কুমিল্লা ছাড়াও আরও বেশ কিছু জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে তিনজন এবং খুলনায় চারজন ডেঙ্গু আক্রান্তকে শনাক্ত করা হয়েছে। খুলনায় আক্রান্তদের মধ্যে দুজন ছাড়পত্র নিয়েছেন বাকি দুজন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।