দুদিনে হাসপাতালে ১০৩ ডেঙ্গু রোগী
সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:২০ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০১৯
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত খোলা কাগজ-এর সহ-সম্পাদক খায়রুল বাশার আশিক এখনো রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউতে। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। তবে আশিকের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ গতকাল খোলা কাগজকে বলেছেন- ‘ওর (খায়রুল বাশার আশিক) অবস্থা খুবই জটিল ছিল। তবে গত দুই দিনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, মনে হচ্ছে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।’
শুধু আশিক নয় রাজধানীতে গত এক সপ্তাহে এ রকম প্রায় তিনশ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নগরবাসীর অসাবধানতা আর অসচেতনতাই এর বড় কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
এ দিকে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারও বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে দেখছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. হাবিবুর রহমান খান গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ একটু বেড়েছে। বিষয়টি আমরা অবহিত। মানুষ কীভাবে নিজেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা করবে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার দুই দিনে রাজধানীতে ১০৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত ৭ দিনে ২৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আষাঢ়ের প্রথমে বৃষ্টির পরেই রাজধানীতে মিলছে ডেঙ্গুর বাহক এডিসের লার্ভার উপস্থিতি। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগীর সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী জুন-জুলাই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে যায়। জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। এ বছর জুনের শুরু থেকে রাজধানীতে প্রতিদিন আশঙ্কাজনকহারে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত নারী-পুরুষ-শিশু মিলিয়ে ৮৩৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারিতে ৩৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৯, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪৫, মে-তে ১৫৫ জন ভর্তি হন। শুধু জুন মাসেই এ পর্যন্ত ৫৭২ জন ভর্তি হয়েছে। ভর্তি রোগীদের মধ্যে এপ্রিলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এ রোগে ৯ হাজার ২২৮ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ২৪ জনের মৃত্যু ঘটেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, এর আগে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ১ ও ২নং সেরোটাইপের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটলেও, গত বছর ৩নং সেরোটাইপের দেখা পাওয়া যায়। সেরোটাইপ সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারলে রোগীদের চিকিৎসায় এবং মৃত্যুঝুঁকি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন- কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। সরকারকে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আর রাজধানীবাসীর উচিত আশপাশের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। কোনো পাত্রে যেন পানি জমে থাকতে না পারে। আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগ কম থাকে।