ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বর্ষায় অরক্ষিত রোহিঙ্গা শিবির

জলাবদ্ধতা-ভূমিধসের ভয়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ১০:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৯

বর্ষা এলেই বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। পাহাড়ি বসতিতে থাকে ভূমিধসের ভয় আর সমতলে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা। পলিথিনে মোড়া রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসনগুলো একেবারেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে। মানবিক বিবেচনায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও, আসন্ন বর্ষায় তাদের সুরক্ষা কীভাবে হবে তা নিয়ে কারো যেন মাথাব্যথা নেই।

বর্ষা মৌসুমের আগেই অতি ঝুঁকিতে থাকা ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। এ জন্য দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে বাধসাধে জাতিসংঘসহ রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও। দূরে হওয়ায় রোহিঙ্গাদেরও কিছুটা আপত্তি রয়েছে ভাসানচরে যাওয়ায়। এসব কারণে মাঝপথেই থেমে গেছে তাদের স্থানান্তরের উদ্যোগ।

সম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করে যাওয়া জাতিসংঘের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, ভাসানচরে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা খরচে রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু আপনারা তাদের সেখানে যেতে বাধা দিচ্ছেন। বর্তমানে রোহিঙ্গারা যেখানে আছে, সেখানে পাহাড়ধসে তাদের প্রাণহানি হলে দায় আপনাদের নিতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে কিছু লোককে ভাসানচরে নিয়ে যেতে চাই। কারণ আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এ সময় ভূমিধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে যদি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা দায়ী থাকব না। যারা বাধা দিচ্ছে তারা দায়ী থাকবে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় শালবন ২৬নং ক্যাম্পের অফিস ইনচার্জ মোহাম্মদ আজিজের সঙ্গে। তিনি খোলা কাগজকে জানান, তার ক্যাম্পের ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কার্যত অরক্ষিত রয়েছেন। তিনি বলেন, পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘরগুলো বড় ধরনের ঝড়-তুফান-বৃষ্টি মোকাবেলায় যথেষ্ট নয়। বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টি হলে এত মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে তা জানেন না। মোহাম্মদ আজিজ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুর্যোগ মোকাবেলায় অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভূমিধস হলে অনেক মানুষ হতাহত হতে পারে।

এ বিষয়ে একেবারেই উল্টো অভিমত কক্সবাজার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনের। তার মতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আপাতত কোনো ঝুঁকি নেই। তিনি বলেন, ‘ঝড়-তুফান-বন্যা মোকাবেলায় সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’

এনজিওকর্মী ফয়সাল উদ্দিন নীরব বলেন, বর্ষা এলেই ক্যাম্পের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কাদা আর হাঁটুপানিতে ভরে যায় বেশিরভাগ ক্যাম্প। একেবারে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও এনজিওকর্মীদের জীবন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, পাহাড় কেটে, বন সাফ করে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠেছে। পাহাড়ের মাটিতে অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে গেছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। ফলে সমতলের ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। তার আশঙ্কা একটানা ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ের ঢালের বসতি ভূমিধসের কবলে পড়তে পারে।

 
Electronic Paper