ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নেপিদোর সঙ্গে বৈঠক চায় ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৯

আজ (২০ জুন) বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ছয় কোটি মানুষ শরণার্থী। এটি এযাবৎ কালের শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। বাংলাদেশেও জাতিগত সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী। এই আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো জানায়, তারা দ্রুত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। তারা এই দেশের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না।

 

প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের জন্য ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে। মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা সেই রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানে চলতি জুন মাসের শেষ দিকে কক্সবাজারে নেপিদোর সঙ্গে বৈঠক করতে চায় ঢাকা। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩ মে রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠক নেপিদোতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিদোকে প্রস্তাব দেয়া হয়, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যেসব রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, সে বিষয়ে দুই পক্ষ বৈঠক করে সমাধানে আসতে পারে। ঢাকার এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় নেপিদো।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানের জন্য দুই পক্ষের সম্মতিতে বৈঠকটি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম মূলত এই বৈঠকের বিষয়টি সমন্বয় করবেন। কমিশনার বৈঠকের সময় জানালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে জানানো হবে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা এর মধ্যেই বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছি। চলতি জুন মাসের শেষ দিকে বৈঠকটি করতে চাই। আজকালের মধ্যে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে চিঠি দেবো।’

কমিশনার আবুল কালাম আরও বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ দিকে বৈঠকটি করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু মিয়ানমারের সম্মতি জানা প্রয়োজন বা তাদের সুবিধাজনক সময় কখন, সেটাও জানা প্রয়োজন। তাই আমাদের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করবে।’

এদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।

ঢাকা-নেপিদোর মধ্যে সই হওয়া ওই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চুক্তি সই হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বারবার এড়িয়ে গেছে মিয়ানমার।

শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করার কথা ছিল মিয়ানমারের। কিন্তু সেই পরিবেশও তৈরি করতে পারেনি দেশটি। জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরাও এ কথা বলেছেন। তারা বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চৌকিতে কথিত হামলার ধুয়ো তুলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর হত্যা-ধর্ষণ-নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আট লাখেরও বেশি মানুষ। বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে আগে থেকে থাকা রোহিঙ্গারা মিলিয়ে এসংখ্যা প্রায় ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

 
Electronic Paper