ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বজ্রপাত ঝুঁকি জুনেও

মৃত্যু ঠেকাতে পরিবেশ রক্ষার তাগিদ

এম কবীর
🕐 ১০:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯

দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাসে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটলেও এ বছর জুনের মাঝামাঝি পেরিয়ে গেলেও বজ্রপাত কমছে না। গত শুক্রবার বজ্রপাতে পাবনায় এক স্কুলছাত্রীসহ সারা দেশে ৯ জন নিহত হয়েছেন।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় না থাকলেও সতর্কতামূলক কিছু পদক্ষেপ নিলে নিরাপদ থাকা যেতে পারে। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, হাওর-বিল-গ্রামাঞ্চলে লম্বা খুঁটি বা টাওয়ার বসিয়ে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা করলে বছরে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব।

ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য মতে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত বজুপাতে মোট ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৮ জন। নিহতদের মধ্যে ১৪ শিশু, পাঁচ নারী ও ৫৪ জন পুরুষ। এর মধ্যে ২১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে’র মধ্যে নিহত হন ১৮ জন। ২০১৮ সালে বজ্রপাতে নিহত হন ২৭৭ জন। ওই বছরের মে মাসেই নিহত হন ১৫৮ জন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১০-২০১৮ সালের ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে বজ্রপাতে ২ হাজার ১০৬ জন মারা গেছেন। মে মাসকে বজ্রপাতের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হিসেবে দেখানো হয়েছে গবেষণায়।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম বলেন, প্রতিবছর বজ্রপাতের কারণে অসংখ্য প্রাণহানি হচ্ছে। মূলত ভূমণ্ডল উত্তপ্ত হলে জলীয় বাষ্প হাল্কা হয়ে ওপরে উঠে ঝড়ের সৃষ্টি করে। বাতাসে কার্বন ও সিসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বজ্রপাত হওয়ার একটি বড় কারণ। কার্বন ও সিসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অন্য আরও যেসব উপাদান মেঘ তৈরিতে সহায়ক সেগুলো সক্রিয় বলেই বজ্রপাত বেশি হচ্ছে এমনটি মনে করেন এই আবহাওয়াবিদ।

তিনি বলেন, প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত অনেক বজ্রপাতের মতো ঘটনা ঘটে। তবে জুন, জুলাই ও আগস্টে বজ্রপাতের তীব্রতা কম থাকে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক ও দুর্যোগ ফোরামের মেম্বার সেক্রেটারি গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, বজ্রপাত রোধ করা সম্ভব নয়। বজ্রপাতের কারণে যে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে সেগুলো রোধকল্পে কিছু কাজ করে যেতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে ১০ লাখ তাল গাছ লাগানোর যে পরিকল্পনা হয়েছে, সেগুলো রাস্তার দুইপাশেই লাগানো হচ্ছে। কিন্তু বজ্রপাতের কারণে প্রাণহানি ঘটছে হাওর বা ফাঁকা এলাকায়। তাই বেশি বেশি তালগাছ লাগানো উচিত যেখানে বজ্রপাত ঘটছে।

এছাড়া উঁচু টাওয়ারের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটির বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হলেও বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমানো যাবে। তিনি বলেন, হাওর-বিল এলাকায় তাল গাছ লাগিয়ে বা টাওয়ার তৈরি করে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা করলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গাছপালা কমে যাওয়ায় বাড়ছে বজ্রপাতের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানি। কখন কোথায় বজ্রপাত হবে তার নিশ্চয়তা নেই তবে দেশের ৬৪টি জেলাতেই বজ্রঝুঁকি রয়েছে। প্রাণহানি কমাতে সচেতনতাই একমাত্র অবলম্বন। বজ্রপাত ঠেকাতে পরিবেশ রক্ষায় সবার উদ্যোগী হওয়া জরুরি বলে জানান তারা।

 
Electronic Paper