ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চার্জশিট এ সপ্তাহেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫৯ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০১৯

ফেনীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিট এ সপ্তাহেই আদালতে জমা দেওয়া হবে। সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ও ফেনী আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

রোববার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া নুসরাত হত্যার ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে করা আইসিটি মামলার পুলিশ প্রতিবেদনও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান পিবিআইপ্রধান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় এ মামলার তদন্তে যাকেই জড়িত পাওয়া গেছে তাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। চার্জশিট তৈরির কাজ চলছে। আইনের চোখে সবাই সমান। কেউ এখানে সুবিধা পাবে না। আইন অনুযায়ী যার বিরুদ্ধেই জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, চার্জশিটে তার নাম রেখেই তা আদালতে জমা দেওয়া হবে।

গত ১০ এপ্রিল নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার আগেই সোনাগাজী থানা পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন- আফসার উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ, আরিফুল ইসলাম, আলা উদ্দিন, নূর হোসেন ওরফে হোনা মিয়া, সাইদুল ইসলাম ও উম্মে সুলতানা পপি। এদের মধ্যে আগে থেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা সিরাজ-উদ-দৌলা গত ২৪ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়া সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলমও এ ঘটনায় জড়িত বলে তথ্য দেয় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা।

পরে নুসরাত হত্যায় সিরাজ-উদ-দৌলা, আফসার উদ্দিন, রুহুল আমিন, মাকসুদুল হক ও উম্মে সুলতানা পপিসহ মোট ১৬ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পিবিআই। এদের প্রত্যেকেই গ্রেফতার হওয়ার পর জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মায়ের করা মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দোলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কারাগার থেকেই সে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকে। এতে নুসরাত ও তার পরিবার রাজি না হলে হত্যার ষড়যন্ত্র করে অধ্যক্ষ। সেই অনুযায়ী, গত ৬ এপ্রিল নুসরাত ওই মাদরাসায় পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে নুসরাত।

ওসি মোয়াজ্জেম নিজেই ভিডিও ধারণ করেন
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় সোনাগাজী মডেল থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল রোববার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

পিবিআই সদর দফতরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি বলেন, তদন্তে নুসরাতকে থানায় জেরা করে ওই দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনেই ভিডিও ধারণ করেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত। তদন্তে থানায় বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়াসহ প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। তদন্তে প্রমাণিত সব তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

গত ২৭ মার্চ রাফিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনো তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।

অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চারতলায় যায়। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ- দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।

 
Electronic Paper