ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

দেশকে আরও এগিয়ে নেব

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকবে। আমরা সেতুগুলোর উন্নয়ন করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান মিলে সব দিক থেকে মানুষের যোগাযোগ যাতে সহজ হয় সেই চেষ্টা করছি। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আরও এগিয়ে নেব। শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং দ্বিতীয় গোমতী সেতুর উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কড্ডা-১, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে বাইমাইল সেতুর উদ্বোধন করেন। এছাড়া ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনেরও উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

এ সময় দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যে সেতুগুলো উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, তা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত উপযোগী। পাশাপাশি আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আমরা তৈরি করেছি। সেখানেও একটা বিরাট অবদান রাখবে। কারণ বর্তমান বিশ্বটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ।

তিনি বলেন, আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যার কাছ থেকে উন্নয়নের সহযোগিতা পাচ্ছি, আমরা সেটা গ্রহণ করে দেশের মানুষের কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই আমরা মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পেরেছি। দেশবাসীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, আমাদের ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।
এ সময় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

রাজধানীর মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের জন্য রাজধানীবাসীকে একটু কষ্ট সহ্য করার অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। এই কাজের জন্য ঢাকায় মানুষ যানজটে কষ্ট পাচ্ছেন। আরও ভালোভাবে চলাচলের জন্য এই কষ্টটা একটু সহ্য করতে হবে। আশা করি এ কাজটা হয়ে গেলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না।

তিনি জানান, মহাসড়কগুলোতে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার করে দেওয়া হচ্ছে এবং উপজেলা পর্যন্ত চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। আর ১০১০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া উদ্বোধন হয়েছে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কড্ডা-১ সেতু ও বাইমাইল সেতু। এসব অবকাঠামোর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনভোগান্তি কমবে বলে এ সময় আশাপ্রকাশ করা হয়।

বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও আসছে
ঢাকায় মেট্রোরেল চালুর পর বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে স্বল্প বিরতির আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই পরিকল্পনা জানান তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বাঁশি বাজিয়ে, সবুজ পতাকা উড়িয়ে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ এখনো ডিজেলচালিত ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। এরপর দূরপাল্লায়ও বিদ্যুৎচালিত ট্রেন চালুর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মেট্রোরেল যেমন চালু করতে যাচ্ছি, সেই সঙ্গে আমরা বিদ্যুৎচালিত ট্রেন, যা একান্তভাবে পরিবেশবান্ধব, সেই বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও চালু করব। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

তেলচালিত ট্রেনে দূষণের মাত্রা বেশি হওয়ায় উন্নত দেশগুলো এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশেও তেলের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত ট্রেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক সময় হাহাকার ছিল। আজকে প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছি। যেসব মেগা প্রকল্প এবং যেসমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, তাতে বিদ্যুতের কোনো অভাব থাকবে না।

রেলের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত দিন যাচ্ছে রেল আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। মানুষ এখন রেলে বেশি চড়তে চায়। চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের আরও বেশি যাত্রীবাহী কোচ দরকার। কাজেই আরও বেশি কোচ আমাদের কিনতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রেলে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো হলো- পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু-ঘুনধুম রেললাইন স্থাপন প্রকল্প।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব রেল সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, পর্যায়ক্রমে সেগুলো চালু করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশ যেন সংযুক্ত হয় সে ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পঞ্চগড় প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরপরই পঞ্চগড় থেকে ঢাকার পথে রওনা হয় ৮৯৬ আসনের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।

সপ্তাহে কোনো বিরতি ছাড়া সাত দিনই চলাচল করবে ট্রেনটি। ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত ১২টা ১০ মিনিটে। পঞ্চগড়ে পৌঁছবে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে। আবার পঞ্চপড় থেকে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছবে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে বিমানবন্দর স্টেশনে সামান্য বিরতি দেবে। এরপর পার্বতীপুর পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে। দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিরতি দিয়ে পঞ্চগড় স্টেশনে পৌঁছবে। ভাড়া হবে আন্তঃনগর দ্রুতযান ও একতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। শোভন চেয়ার ৫৫০ টাকা, সুগগ্ধা ১০৫৩, এসি সিট ১২৬৩ এবং এসি বার্থ ১৮১২ টাকা।

 
Electronic Paper