ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড

শীর্ষে চীন যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ ভারত সপ্তম

নাজমুল হুসাইন
🕐 ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৯

বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে গত বছর। এ সময় প্রায় তিন হাজার ৬১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে, আগের বছরের চেয়ে যা ৬৮ শতাংশ বেশি। বিনিয়োগকারী দেশের শীর্ষে রয়েছে চীন। গত বছর দেশটি বাংলাদেশে এক হাজার ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৮৩৪ মিলিয়ন ডলারই বিদ্যুৎ খাতে।

বিদেশি বিনিয়োগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বরাবরের মতোই প্রচলিত খাতেই বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। ২০১৮ সালে শুধু বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক হাজার ১২ মিলিয়ন ডলার। যা পুরো বিনিয়োগের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। এছাড়া অন্যান্য বছরের মতো চার প্রচলিত খাত যথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ৭৩০ মিলিয়ন ডলার, বস্ত্র খাতে ৪০৮ মিলিয়ন, আর্থিক খাতে ২৮৩ মিলিয়ন ও টেলিকম খাতে ২২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। অর্থাৎ এ পাঁচ খাতেই গেছে সার্বিক বিনিয়োগের সিংহভাগ।

বাকি বিনিয়োগের মধ্যে জ্বালানি খাতে ১১১ মিলিয়ন ডলার, চামড়া খাতে ৬১ মিলিয়ন, আবাসনে ৫৫ মিলিয়ন, কেমিক্যালে ৪৭ মিলিয়ন, ইন্স্যুরেন্সে ২৮ মিলিয়ন, সফটওয়্যারে ২৬ মিলিয়ন এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে ১৯ মিলিয়ন এসেছে। আর অন্যান্য সব খাত মিলে ৪১৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে গত বছর।

বিনিয়োগের চিত্র বিশ্লেষণে আরো দেখা যাচ্ছে, গত বছর মাত্র তিন দেশ থেকেই এসেছে পুরো বিনিয়োগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। চীনের পর গত বছর বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ এসেছে নেদারল্যান্ডস থেকে। ২০১৮ সালে দেশটি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৬৯২ মিলিয়ন ডলার। তাদের বিনিয়োগের সিংহভাগ ৬০৮ মিলিয়ন ডলার গেছে আবার খাদ্য উৎপাদন খাতে। আর তৃতীয় স্থানের দেশ যুক্তরাজ্য ৩৭১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, হংকং ও ভারত রয়েছে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে। যথাক্রমে দেশগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ১৭৪, ১৭১, ১৭০ ও ১২১ মিলিয়ন ডলার।

বিনিয়োগের আর্থিক পরিমাণ কিছুটা বাড়লেও টেকসই বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে কোরিয়া, জাপান ও জার্মানি পিছিয়ে রয়েছে। বিনিয়োগের তালিকায় এসব দেশের অবস্থান যথাক্রমে ১০ম, ১৩তম ও ১৯তম। এসব দেশ যথাক্রমে ৭৩, ৫৮ ও ২৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে গত বছর।

এ পরিস্থিতিতে দেশের বিনিয়োগ রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও এরমধ্যে টেকসই বিনিয়োগের বেশ অভাব রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চীন সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী এবং তাদের বিনিয়োগ মূলত বিদ্যুৎ খাতে। আর হঠাৎ করে তাদের এ খাতে বিনিয়োগ করতে আসার উদ্দেশ্য হলো অধিক মুনাফা অর্জন।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনে। সেটা জেনে চীনের বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করছে। চীনের এ ধরনের বিনিয়োগ টেকসই নয়।

তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বিনিয়োগে উল্লম্ফনের বড় কারণও বিদ্যুৎ খাতে চীনের অতি বিনিয়োগ। এর আগে, ২০১৭ সালে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছিল মাত্র ৯১ মিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালে এ বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৬১ মিলিয়ন ডলার। সেখানে গত বছর দেশটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতেই ৮৩৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী যেখানে ৩০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশ রেকর্ড বিনিয়োগ পেয়েছে। সেটা অনেক বড় পাওয়া। আর এসব বিনিয়োগ অবশ্যই টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দেশের প্রকৃত বিনিয়োগ আরও বাড়বে। কারণ আমাদের পাইপলাইনে প্রচুর বিনিয়োগ প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া গত বছর আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা অধিগ্রহণ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে। সে অর্থ এখনো আসেনি। সেটা আগামী বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এদিকে বিডার তথ্য বলছে, এ বছরও বিনিয়োগের প্রবাহ ভালো রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ৯১০ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের প্রথম তিন মাসে ছিল ৮২৩ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় সংসদকে গত পাঁচ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের তথ্য দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, এ সময়ে দেশে ২৮ হাজার ৫৫৫ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশ এই বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ চীনের।

পাঁচ বছরে চীন ৮,১০৭ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭,৮৩৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন, সিঙ্গাপুর ২,২৬১ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন, সৌদি আরব ২,৪৬১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন, নেদারল্যান্ডস ১,৭৭৪ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ১,৯৬২ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ১,২১৯ দশমিক ১৯ মিলিয়ন এবং ভারত ৯৭৬ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

এসডিজি বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮,০০০-৯,০০০ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উৎপাদনশীল খাতে এ বিনিয়োগ হওয়া জরুরি। না হলে কর্মসংস্থান বাড়বে না।

 
Electronic Paper