২৪ জেলায় নেই নিরাময় কেন্দ্র
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
সারা দেশে সরকারি চারটি ও বেসরকারি ২৯৫টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থাকলেও, দেশের ২৪ জেলায় নেই কোনো মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এতে ওই সব জেলার মাদকসেবীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্ধকার জীবন থেকে তাদের আর ফেরা হচ্ছে না স্বাভাবিক জীবনে। ফলে সংশ্লিষ্ট জেলার মানুষ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রয়োজনের কথা বলছেন। তবে নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই, যা আছে এগুলোকে মানসম্মতভাবে গড়ে তুলতে হবে।’
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়। ভারতের কাঁটাতার পেরিয়ে সহজেই অনেক ভয়াবহ মাদক প্রবেশ করে এ জেলায়। তরুণদের একটি অংশ ইয়াবা ও গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়লেও তাদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ নেই। পঞ্চগড়ের স্থানীয় সংবাদকর্মী আনিস প্রধান খোলা কাগজকে জানান, তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চগড়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের বিকল্প নেই।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই এমন জেলার তালিকায় গোপালগঞ্জের নামও রয়েছে। পুলিশের বরাত দিয়ে একটি সূত্র খোলা কাগজকে জানায়, দুই বছর আগে এক জরিপে দেখা গেছে জেলার ৫০ শতাংশ তরুণ-যুবারা মাদকাসক্ত। এখানে কোনো মাদকসেবীর জরুরি চিকিৎসার দরকার হলে তাদের ফরিদপুর কিংবা ঢাকায় পাঠাতে হয়।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান খান খোলা কাগজকে বলেন, ‘সরকার অনেক খরচ করে আলাদা নিরাময় কেন্দ্র তৈরি করার চেয়ে, প্রত্যেক সদর হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এতে মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক সহায়ক হবে।’
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই পাবর্ত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়ও। রাঙ্গামাটির স্থানীয় সংবাদকর্মী প্রান্ত রনি জানান, এই জেলাগুলোতে মাদকের ভয়াবহতা তুলনামূলক কম। তবে স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাংলা মদের প্রচলন রয়েছে।
উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে সংবাদকর্মী কুমার শুভ রায় খোলা কাগজকে জানান, সহজলভ্যতার হিসাবে পিরোজপুর সদর ‘ফেনসিডিল জোন’ আর ‘মঠবাড়িয়া ইয়াবা’ জোন হিসেবে পরিচিত। তিনি আরও জানান, পিরোজপুরের কোনো মাদকাসক্তের চিকিৎসার দরকার পড়লে খুলনায় যেতে হয়। কুমার শুভ রায় বলেন, ‘জেলার অনেক মাদকসেবী জানেই না, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।’
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই এমন ২৪ জেলা হলো : শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বাগেরহাট, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মেহেরপুর, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) এস এম জাকির হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, ‘যেসব জেলায় নিরাময় কেন্দ্র নেই, সেখানে আমরা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছি। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে তাদের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমরা সরকারিভাবে জেলাপর্যায়ে নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ হাতে নেব। এক্ষেত্রে যেসব জেলায় নিরাময় কেন্দ্র নেই, ওই সব জেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ খোলা কাগজকে বলেন, ‘দেশে মাদকাসক্ত মানুষের তুলনায় নিরাময় কেন্দ্র অনেক কম। তার মধ্যে ২৪ জেলায় কোনো নিরাময় কেন্দ্র নেই। সরকার এ বিষয়ের ওপর অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক জেলায় নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি প্রত্যেক বিভাগে ২০০ বেডের নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য। এ ছাড়া সব জেলার মাদকসেবীরা যাতে চিকিৎসার আওতায় আসেন সেই লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কাজ করছে।’