ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চিকিৎসার বাইরে ৯৯ ভাগ মাদকসেবী

ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ১০:৩৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০১৯

দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্তের বিপরীতে সরকারি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র চারটি। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন ৯৯ শতাংশ মাদকসেবী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্তের জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে যতগুলো নিরাময় কেন্দ্র দরকার, তার সিকিভাগও নেই। এসব কেন্দ্রের সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধূমপান ও মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ডা. অরূপ রতন চৌধুরী।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, ‘জনসংখ্যা অনুপাতে যতগুলো নিরাময় কেন্দ্র আছে, তা মোটেই যথেষ্ট নয়। আবার সেগুলো আদর্শ মান বজায় রাখছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। অধিকাংশ নিরাময় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই, কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেই, সেবার মানও খুব খারাপ।’

অরূপ রতন চৌধুরীর শঙ্কা বিপুলসংখ্যক এই মাদকাসক্তকে চিকিৎসা সেবার আওতায় না আনতে পারলে আগামী দুই তিন বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতায় চারটি নিরাময় কেন্দ্রে মধ্যে একটি ঢাকায়, অন্য তিনটি চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায়। এরমধ্যে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রটি ১২৪ শয্যার; অন্য তিনটিতে মাত্র ২৫ জন নিরাময়সেবা নিতে পারেন। সব মিলিয়ে ৭০ লাখ মাদকসেবীর বিপরীতে চার সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে আসন রয়েছে মাত্র ১৯৯টি।

সরকারি নিরাময় কেন্দ্র একজন মাদকসেবীর ২৮ দিন চিকিৎসার বিধান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মাদকাসক্তের নিরাময়ের জন্য এত কম সময় যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা খোলা কাগজকে বলেন, ‘যেখানে একজন মানুষ ২৮ দিনে ধূমপানের নেশা ছাড়তে পারেন না, সেখানে ভয়ঙ্কর সব মাদক থেকে ২৮ দিনে মুক্তি কিভাবে সম্ভব।’ তিনি জানান, এর ফলে অনেকেই ২৮ দিন পরে নিরাময় কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পুনরায় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।

সরেজমিন তেজগাঁও কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ঢিলে-ঢালাভাবে চলছে নিরাময় কেন্দ্রের কার্যক্রম। চিকিৎসা সরঞ্জাম, অবকাঠামো, লোকবলের অভাবও সেখানে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ১২৪ শয্যার এ কেন্দ্রে কয়েকজন পুরুষ মাদকাসক্ত রোগী চোখে পড়লে, নারীদের ২৪ শয্যা ও শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ শয্যাই খালি পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি নিরাময় কেন্দ্রের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২২১টি হলেও কেন্দ্রেগুলোতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১০৪ জন। বাকি ১১৭টি পদই খালি। মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের হালচাল নিয়ে কথা বলতে চাইলে কেন্দ্রের প্রধান পরামর্শক সৈয়দ ইমামুল হোসেন কোনো তথ্য না দিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যান। তবে ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুলজ্যোতি চাকমা খোলা কাগজকে বলেন, ‘প্রচারের অভাবে অনেকে জানেন না, এখানে বিনামূল্যে মাদকসেবীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। নারী ও শিশুদের জন্যও ব্যবস্থা রয়েছে।’

তিনি জানান, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল ও উন্নত যন্ত্রপাতি না থাকায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সদিচ্ছা থাকলেও অনেক সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিভাগীয় পর্যায়ে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলো ভালো নেই। অব্যস্থাপনা-অনিয়মের কারণে বছরের অধিকাংশ সময় রোগী শূন্য থাকে সেগুলো। তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে রাজশাহীর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১০ বছরে (২০০৮-২০১৭) সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র ৬০ হাজার ২৩২ জনকে নিরাময়সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। যা মোট মাদকাসক্তের মাত্র শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ।

এ সময়ে কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৭০৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাকি তিনটি বিভাগীয় শহরের সরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এক হাজার ১৭৫ জন। এ ছাড়া দেশের বেসরকারি ১৯৭টি নিরাময় কেন্দ্রে ৪৩ হাজার ৩৫৩ জন চিকিৎসা দেওয়া নিয়েছেন। সর্বশেষ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র বেড়ে ২৯৫টি হয়েছে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ হাজার ১৪৩ জন। আর বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৮৯২ জন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩৫ জন। অধিদপ্তরের এই হিসেবেও চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের ৯৯.৪৬ শতাংশ মাদকসেবী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামালউদ্দীন আহমেদ খোলা কাগজকে বলেছেন, মাদকাসক্ত রোগীর অনুপাতে নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা অপ্রতুল। সরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই বলে কিছু সংকট রয়েছে। লোকবল নিয়োগ ও কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হলে কেন্দ্রগুলোতে কোনো সমস্যা থাকবে না।

 
Electronic Paper