ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলাদেশের পাটে লাভবান ভারত 

বিবিসি বাংলা 
🕐 ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৮, ২০১৯

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাট দিয়ে তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে। অথচ প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশ থেকে পাটের কাঁচামাল কিনে নিয়ে সেটা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করে বিদেশ বিক্রি করছে এবং বিপুল মুনাফা গড়ছে।

বাংলাদেশের পাটের খ্যাতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী। ফ্রান্সও সেরকম একটি দেশ। এটির রাজধানী প্যারিসে গত নয় বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন বাংলাদেশের নাগরিক তৃণা খান। সেখানে স্থানীয়দের নানা ধরনের পাটজাত পণ্য ব্যবহার করতে দেখেছেন। অথচ পাটপণ্য ব্যবহারকারী সেই বিদেশি ক্রেতাদের অধিকাংশই জানেন না এই পাট উৎপাদন হয় বাংলাদেশে।

তৃণা খান বলেন, আমি প্যারিসসহ আশপাশের ছোট শহরগুলোতে মানুষকে পাটের জিনিসপত্র ব্যবহার করতে দেখেছি। এমনকি ফাইভস্টার হোটেলগুলোতেও দেখি আমাদের দেশের পাটের তৈরি কার্পেট। কিন্তু তারা এসব জিনিস কিনেছে ভারতের থেকে। কেউ জানেই না যে, পাট বাংলাদেশে উৎপাদন হয়।

বিশ্বের এমন নানা দেশে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের নানা ধরনের পণ্য। অথচ সম্ভাবনাময় এই খাতে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে হচ্ছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোকে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে ৩৯৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

দক্ষ জনশক্তির অভাব, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং বিপণনে দক্ষতা না থাকার কারণে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বাজার ধরার মতো স্ট্রং মার্কেটিং (শক্তিশালী বিপণন ব্যবস্থা) আমাদের নেই, এটা পলিসি লেভেলের ব্যাপার। ভারত আধুনিক মেশিনে পাট প্রসেস করে বিদেশে রপ্তানি করছে। আর আমাদের মেশিন সেই মান্ধাতার আমলের। এ ছাড়া পাটকলগুলোয় দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। আমাদের দক্ষ লোক দরকার। দক্ষ বলতে, টেকনিকাল ম্যানপাওয়ার।

পাটের উৎপাদনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় দেশ হলেও পাটের বর্তমান বিশ্ববাজার দখল করছে ভারত। বাংলাদেশে উৎপাদিত এসব পাটের কাঁচামাল ভারতেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় এবং বিদেশি ক্রেতারা এই পণ্যগুলো সরাসরি বাংলাদেশ থেকে নয় বরং ভারতের কাছ থেকে কিনে থাকে। ফলে বাংলাদেশ পাট প্রক্রিয়াজাত করে লাভ গুনছে ভারতের বাজার। প্রধানত বৈদেশিক চাহিদা অনুযায়ী তৈরি পণ্য রপ্তানি সেই সঙ্গে সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে সেটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের পাট ব্যবসায়ী তপন দাস।

তিনি বলেন, ভারত পাট আমদানি করে সেটা নিজেদের মেশিনে প্রসেস করে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে। আর তারা তাদের নিজেদের পুরো বাজারের চাহিদা নিজেরা মেটায়। তার মানে তাদের একটা মার্কেট প্রটেকশনের জায়গা পাচ্ছে।

এ ছাড়া বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে না পারা সেই সঙ্গে সবচেয়ে ভালো মানের পাট রপ্তানি করে দেওয়ার ফলে মানসম্মত পণ্য তৈরি করতে না পারায় বাংলাদেশ তার বাজার তৈরি করতে পারছে না বলে মনে করেন পাট পণ্যের উদ্যোক্তা শাফিয়া সামা।

তার কথায়, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় বড় দেশগুলোয় কার ইন্ড পাটের বড় একটা বাজার আছে। অথচ বাংলাদেশ সেই বাজারটা দখল করতে পারছে না। এটার দুটো কারণে। প্রথমত, ভালো মান নিশ্চিত না করা ও দ্বিতীয়ত দাম নির্ধারণ করতে না পারা। বিদেশি বায়াররা (ক্রেতারা) এই দুটো জিনিসই সবার আগে দেখে। এ ছাড়া পাট চাষিদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াকেও পাটের বাজার পড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ বলে তিনি মনে করেন।

অন্যদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পাটের বাজার পড়ে যাওয়ার পেছনে বিশ্বব্যাংকের একটি কারসাজিকে দায়ী করছেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বিপণন মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ। বিশ্বব্যাংকের সেই ফর্মুলায় বাংলাদেশের আদমজী জুটমিল বন্ধ হয়ে যায় এবং সে সময় বাংলাদেশের পুরো বাজার ভারত দখল করে নেয় বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ বলেন, ২০০২ সালের দিকে আদমজী জুটমিল বন্ধ হয়ে যায় বিশ্বব্যাংকের ফর্মুলায়। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের লোনে ভারতে বড় মিল স্থাপিত হয়েছে। এতে ভারত লাভবান হলো, আমাদের সব ক্রেতা তারাই পেল।

পাটের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। পাটের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তবে বর্তমানে আগের দৃশ্যপট খুব একটা বদলায়নি।

 
Electronic Paper