বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪ মনিটরিং টিম
কাগজে আছে কাজে নেই!
নাজমুল হুসাইন
🕐 ১১:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০১৯
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে ১৪টি বাজার মনিটরিং টিম রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। আর একেকটি টিমে রয়েছে ১১ জন সদস্য, যার প্রধান উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। বাজার নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের এ বিশাল বহর সম্পর্কে অনেকে জানলেও দেখেননি কেউ। কারণ এসব টিমের কার্যক্রম শুধু কাগজপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অফিসের খাতাপত্রের মধ্যেই প্রতিদিনের বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখছেন এ নিয়ন্ত্রক টিমের সদস্যরা!
কারণ খোদ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিদিন ১৪টি টিমের মধ্যে দুটি টিম রাজধানীর বাজারে উপস্থিত হচ্ছে। সে টিমের ১১ সদস্যের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরাও উপস্থিত থাকেন। তারা বাজার পর্যবেক্ষণের পরে এসব পণ্যের আমদানি, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দামের সামঞ্জস্যতা, দেশি উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রী ও সচিব বরাবর প্রতিবেদন পেশ করেন প্রতিদিনই। তার ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্য সব পদক্ষেপ নেয়।
কিন্তু কোনো বাজারে কখনো এসব টিমের উপস্থিতি দেখেনি সাধারণ জনগণ, এমনকি ক্রেতা-বিক্রেতারা? এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছে। কোথায় কখন কীভাবে এসব টিম আসে ও যায় জানে না কেউই। মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর এ টিম পুনর্গঠন করে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল (আইআইটি অনুবিভাগ)। ওই সেলের যুগ্ম সচিব (আইআইটি-১) এ কে এম আলী আহাদ খান খোলা কাগজকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এ টিমগুলোর কাজ বাজার মনিটরিংয়ের। আর যেসব সংস্থা অভিযান পরিচালনা করে, তাদের কাজ দৃশ্যমান মনে হয়। কিন্তু ব্যস্তবে এসব টিম প্রতিদিনই কাজ করছে। আসন্ন রমজান উপলক্ষে কার্যক্রম আরও জোরালো করার কথা আমরা ভাবছি।
প্রতিটি টিমের ১১ জন করে সদস্যের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব প্রধান সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন করে সদস্য থাকে। বাকি সদস্য নেওয়া হয় ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা যে কোনো একটি সিটি করপোরেশন, ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ থেকে একজন করে।
শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এসব সংস্থার কোনো সদস্য কখন কীভাবে ওই মনিটরিং টিমে যুক্ত হন, তা তিনি নিজেও জানেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চলতি মেয়াদে মনিটরিং টিমের একজন সদস্য বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে টিম হয় একটা। প্রথম প্রথম দু-একদিন মিটিং হয়। এরপর একটি রোস্টার করে পালাক্রমে বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পড়ে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে শেষপর্যন্ত আর বাজারে যাওয়া হয় না। গেলেও দু-একজনের বেশি কখনো উপস্থিত থাকে না। এভাবেই চলছে।’
পরিস্থিতি এর থেকেও ভয়াবহ সেটার আরও প্রমান মেলে একজন টিমের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে। তিনি আইআইটি অনুবিভাগেরই উপসচিব পদে রয়েছেন। তার কত নম্বর টিম ও কীভাবে সেটা বাজারে কাজ করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোন টিমে আছি, সেটা ঠিক মনে নেই। সম্ভবত ৫ নং হতে পারে। তবে আগামী ২৭ তারিখে আমার টিমের মনিটরিংয়ের তারিখ রয়েছে। কিন্তু সেটা নাও সম্ভব হতে পারে। কারণ ওই দিন একটি সমন্বয় সভা আর মন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং পড়ে গেছে।
এদিকে ওই বিভাগের আরেক উপসচিব নারগিস মুরশিদা বলেন, কাজ হচ্ছে। তবে প্রচারণা না হওয়ার কারণে সেটা জানা যায় না। এ কারণে আগামীতে মনিটরিংগুলো দৃশ্যমান করতে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। গণমাধ্যমকে সঙ্গে রাখা প্রয়োজন।
বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে একবার এবং জুনে আরেকবার টিমগুলো পুনর্গঠন করা হয়। সারা বছর টিমগুলোর বাজার পরিদর্শন করার কথা থাকলেও মাঝে মাঝে রোজার মাসে তাদের দেখা গেছে, সেটা মিথ্যা নয়। বর্তমানে যে ১৪টি মনিটরিং কমিটি রয়েছে, সেগুলো গঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের শেষে। আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত এ টিমের মেয়াদ রয়েছে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী টিম গঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান টিমগুলোই কার্যকর থাকবে।
এসব বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির বলেন, এ মনিটরিং টিমগুলো কাঠামোগত দিক থেকে অনেক শক্তিশালী। তারা ঠিকঠাকমতো বাজার মনিটরিং করলে বাজারে অরাজকতা অনেক কমে যেত।