ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন

তদন্তে সেনা আদালত

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ১১:০১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০১৯

রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার দেড় বছর পর অপরাধ তদন্তে সামরিক আদালত গঠন করেছে মিয়ানমার। একজন মেজর জেনারেল এবং দুজন কর্নেলকে নিয়ে এই আদালত গঠন করা হয়। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, সেই সেনাবাহিনী নিজেদের অপরাধ তদন্ত কতটা স্বচ্ছভাবে করতে পারবেন বা করবেন তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার এক বিবৃতি দিয়ে সেনা আদালত গঠনের বিষয়টি জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। বিবৃতিতে বলা হয়, মেজর জেনারেল মিয়াত কিয়াও এই প্যানেলে নেতৃত্ব দেবেন। তার সঙ্গে থাকবেন কর্নেল কিওয়া কিওয়া নায়েইং এবং থান নায়েইং। তারা জাতি নিধনের জন্য গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ অভিযোগ তদন্তে কাজ করবেন।

এদিকে সামরিক আদালত গঠন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি ছলনা বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক নিকোলাস বেকুইলিন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ ঠেকাতে এটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি চাল। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করলেও এখনো পর্যন্ত ওই বাহিনীতে সংস্কারের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

নিকোলাস বেকুইলিন আরও বলেন, আন্তর্জাতিক চাপকে কমিয়ে আনার জন্য এই নতুন আদালত আরেকটি বাজে উদাহরণ। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ভয়াবহ অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেনাবাহিনী। তারা কোনো সংস্কারই দেখাতে পারেনি। সেনাবাহিনী তার নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এর সবটাই বিপজ্জনক ও বিভ্রান্তিমূলক।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই প্যানেল গঠনের মানে হলো জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ফের আরও সময় কিনে নেওয়া।

অর্থাৎ তারা বলতে পারবেন, এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু এই আদলত গঠনের মাধ্যমে সত্যিকারার্থে কোনো ফল আসবে না এবং এই খোড়া অজুহাতে কেউ নিজেকে অতি সরল বলেও প্রমাণ করতে পারবে না।

২০০৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ, গণহত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত অন্তত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয়ে রয়েছে। বহু হতাহতের ওই ঘটনার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন ফুটেজ ও খবরেও তার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভয়াবহ সেই রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ পায়। পরে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ, মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন এ নৃশংসতার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। এ বিষয়ে দেশটির সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দিয়েছে সেনাবাহিনী।

 
Electronic Paper