ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আবরারের পর কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৯

দুই বাসের রেশারেষিতে ফের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭টায় নর্দ্দা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জেব্রাক্রসিং পার হওয়ার সময় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। ঘটনার পরপরই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রাস্তা অবরোধ করে। অবরোধের কারণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিমানবন্দর-বাড্ডা-রামপুরা-মতিঝিল রুটের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে বিইউপির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলেও পরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও তার আশপাশে অবস্থিত নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, ইনডিপেনডেন্ট ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা ওই এলাকার ছয়টি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। বিকেলের দিকে এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ডাকসুর ভিপির নুরুল হক নুরও।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিইউপির একটি বাস সকালে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দাঁড়িয়েছিল। সকাল সোয়া ৭টার দিকে আবরার ওই বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন। তিনি নিয়ম মেনে পথচারীর পারপারের জেব্রাক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছিলেন। রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আবরারের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহমেদ চৌধুরী। এ সময় গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আবরার। প্রত্যাক্ষদর্শীরা বলছেন, অন্য একটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়েই বাসটি আবরারকে ধাক্কা দেয়। এ সময় আবরার দুটি বাসের মাঝখানে ছিটকে পড়ে যান। পরে সুপ্রভাত বাসের নিচে চাপা পড়েন তিনি। আবরার বিইউপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপরই তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। পরে বিইউপিতে জানাজা শেষে বিকেলে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। পুলিশ জানিয়েছে ঘাতক বাসের চালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।

গত ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহের মধ্যেই রাজধানীতে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটল। গত বছর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সংঘঠিত আন্দোলনে সক্রিয় থেকে নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়েছিলেন বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদও। আবরারের বন্ধু ও পরিচিতজনরা বলছেন, যে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবরার আন্দোলন করেছে সেই সড়কেই তার প্রাণ গেল। তাহলে কতটুকু নিরাপদ হয়েছে সড়ক? বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অনেকেই প্লাকার্ডে লিখেছেন-‘আবরারের পর সিরিয়ালে কে?’
সকাল থেকে বিইউপিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ঘাতক চালকের ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ব্যবহৃত স্লোগানগুলোও ফিরে ফিরে আসে বারবার। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘টনক তুমি নড়বে কবে’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই,’-ইত্যাদি স্লোগান সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে ঝুলিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তাদের শিক্ষক ও এলাকাবাসী। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা এ সময় কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে। রাস্তা অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সকাল ১০টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র আতিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত হন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মেয়রের সামনে লিখিতভাবে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-১০ দিনের মধ্যে সুপ্রভাত বাসের চালক, হেলপার ও মালিকের ফাঁসি, সুপ্রভাত ও জাবালে নূরসহ যেসব বাস আজ ও এর আগে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেসব বাসের রুট পারমিট বাতিল, চালক-হেলপারের ডোপ টেস্ট, বাসসহ গণপরিবহনের চালক-হেলপারের আইডি কার্ড ভিজিবল করা, বসুন্ধরা আবাসিক/যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জেব্রা ক্রসিংসহ নিহত আবরারের নামে ফুটওভার ব্রিজ করা, সিটিং সার্ভিস বন্ধ, স্টপেজের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করা।

পরে অবশ্য গুছিয়ে আট দফা দাবি উপস্থাপন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- ১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে। ২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৩. আজ থেকে ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে। ৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সব স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। ৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে ‘যৌক্তিক’ উল্লেখ করে মেয়র দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও নিরস্ত হননি শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তায় অবস্থান অব্যাহত রাখে। এ সময় মেয়র আতিকুল ইসলাম এ সময় বলেন, ‘সাত দিন হলো আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আমি মেয়র নই, ভাই হিসেবে বলছি আমাকে সময় দেন।’ তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা আমার সাথে থাকলে আমি সব সমস্যার সমাধান করে ফেলব। বাসের মালিক ও সংশ্লিষ্টদের নিয়মের ভেতরে আনা হবে। ঢাকা সিটিতে ছয়টি কোম্পানির বাস চালানো হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সমাধান করব।’ সুপ্রভাত বাসের চালকের বিরুদ্ধে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। সেই সঙ্গে সুপ্রভাতকে রাজধানীতে নিষিদ্ধও ঘোষণা করেন। দুই-তিন মাসের মধ্যে নিহত আবরারের নামে বসুন্ধরা গেটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বাসও দেন মেয়র। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অটল থাকে। এরপর মেয়র রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাদের তোপের মুখে এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যান মেয়র। মেয়র চলে যাওয়ার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাদের ফাঁসাতে সুপ্রভাতের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বত্তরা। বাসের এক হেলপার নিজেই সুপ্রভাতের ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে শিক্ষার্থীরা জানায়। পরে শিক্ষার্থীরা ওই আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় ওই হেলপার।

ভিপি নূরের সংহতি : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিকেল ৫টার দিকে সংহতি প্রকাশ করতে যান ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নূর। তবে তার উপস্থিতি ভালোভাবে নেননি আন্দোলনকারীদের একাংশ। কোটাবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা রাশেদকে নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে যেতে চাইলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ভিপি নূরকে বাধা দেয়। এ সময় নূরকে উদ্দেশ করে তারা ‘চলে যান, চলে যান’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। ওই স্লোগানের মধ্যেই মিনিট দুয়েক সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন নুর ও রাশেদ। পরে আন্দোলনকারীদেরই আরেকপক্ষ সেখান থেকে নুর ও রাশেদকে বের করে নিয়ে যান। পরে সড়ক বিভাজকের ওপর আন্দোলনকারীদের তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চ থেকে তাদের প্রতিনিধি মাঈশা নূর ঘোষণা দেন, ‘আমরা নুরকে অ্যাকসেপ্ট করছি না।’

নুর বেরিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নুর, তখনো তার বিরুদ্ধে স্লোগান চলতে থাকে। নুর তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হবে। আপনারা সচেতন থাকবেন। আপনারা আপনাদের আন্দোলন করবেন। কোনো প্রয়োজন হলে আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’ আন্দোলনরতদের নিয়ে কোনো ‘কূটকৌশল’ করা হলে ছাত্রসমাজ তার ‘দাঁতভাঙা জবাব দেবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তিনি বলেন, এর আগে ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় রাষ্ট্র বর্বর ভূমিকা পালন করেছে। রাষ্ট্রের সমর্থনে হেলমেট বাহিনী হামলা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনে। পুলিশি নির্যাতন হয়েছিল।’

বুধবার সকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত : এদিকে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার পর ওই পথে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ উঠিয়ে নিলেও রাত ৮টা পর্যন্ত বসুন্ধরা আবাসিকের গেটের সামনে অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হয়। বিইউপি সহকারী রেজিস্ট্রার মাকসুদ জানিয়েছেন, পুলিশ, ওই এলাকার কাউন্সিলর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে অনুরোধে শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, আজকের (মঙ্গলবার) মতো আন্দোলন স্থগিত করা হলেও আগামীকাল (বুধবার) সকাল ৮টা থেকে আবারও অবস্থান ও আন্দোলন শুরু হবে। একই সঙ্গে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তারা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি চান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা : বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তাদের আট দফা দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শামীম আল হাসান সাংবাদিকদের ব্রিফ করে একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। ইতোমধ্যে আমাদের ৪-৫টি দাবির সঙ্গে মেয়র একমত হয়েছেন। আমরা চাই, আমাদের বাকি দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’ বিইউপির এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যে দাবি দিয়েছি তা যৌক্তিক। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের এই দাবি মেনে নিতে হবে।’

নির্দিষ্ট সময় কতদিন জানতে চাইলে শামীম আল হাসান বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবিগুলোতে সময় বলে দিয়েছি। আমরা চাই এসব দাবি সরকার মেনে নেবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিদল এখানে আসুক।’ এ সময় তিনি আট দফা দাবি সাংবাদিকদের পড়ে শোনান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলন নতুন কিছু না, এর আগেও আমরা নিরাপদ সড়ক চেয়ে আন্দোলন করেছি। তখন আমাদের দাবি আদায়ের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এবার নিশ্চয়তা চাই।’
চিরনিদ্রায় শায়িত আবরার : বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সু-প্রভাত বাসচাপায় নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বেলা দেড়টার দিকে মিরপুর সেনানিবাসের মধ্যে বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আবরার আহমেদের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহমেদ চৌধুরী, বিইউপির ভিসি মেজর জেনারেল মো. এমদাদ-উল বারী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আবরার আহমেদের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আত্মীয়স্বজন জানাজায় অংশ নেন। পরে দাফনের জন্য আবরারের মরদেহ বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাত জেলায় সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তানসহ আরও ৯ জনের মৃত্যু
রাজধানীর নর্দ্দায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ ছাড়াও দেশের সাত জেলায় গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তানসহ আরও ৯ জন নিহত হয়েছেন। বেলা ২টায় সিলেটের বিছানাকান্দি থেকে জাফলং যাওয়ার পথে ট্রাকচাপায় মারা গেছেন সেনাবাহিনীর এক সার্জেন্টের স্ত্রী ও সন্তান। এ ছাড়া গাইবান্ধার ধাপেরহাট এলাকায় দুই নারীসহ তিনজন, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় এক যুবক এবং চুয়াডাঙ্গায় এক কিশোর, জামালপুরে স্কুলছাত্র, যশোরের শার্শায় এক যুবক নিহত হয়েছেন।

সিলেট : বেলা ২টার দিকে বিছানাকান্দি থেকে জাফলং যাওয়ার পথে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট সোজা আহমদের স্ত্রী ইলোরা পারভীন (৩৮) ও তার ছেলে সাজিদ মিয়া (৬)। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। দুপুরে তাদের বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের সতিগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মা-ছেলে নিহত হন। আহতরা হলেন- সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট সোজা আহমদের পরিবারের সঙ্গে আসা আবদুর রশিদের ছেলে মাহিন ও সজীব। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গাইবান্ধা : গতকাল সকালে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের ধাপেরহাট এলাকার ফাইভ স্টার মোড়ে যাত্রীবাহী বাসে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও সাতজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রথম ডাঙ্গা গ্রামের আনছের আলীর স্ত্রী ছামছুন্নাহার বেগম (৩৩), ধরলা সাথী গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৩২) ও সিংহসিংলী গ্রামের জয়নাল মিয়ার ছেলে বাসের সুপারভাইজার রেজাউল করিম (৩৪)।

পুলিশ জানায়, রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে জাকির পরিবহনের বাসটি ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসে। বাসটি ধাপেরহাট এলাকায় ফাইভ স্টার মোড়ে পৌঁছালে বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা একটি কাভার্ডভ্যান বাসটিকে সাইড দিতে গিয়ে পেছনের দিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের তিন যাত্রী নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

নাটোর : সকাল ৮টার দিকে সিংড়া উপজেলার শেরকোলে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মাসুদ রানা (২৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত মাসুদ রানা বগুড়ার শিবগঞ্জের রফিকুল ইসলামের ছেলে। ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানা-পুলিশের ইনচার্জ এসআই মোজাম্মল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মাসুদ রানা ট্রাকযোগে বগুড়া থেকে নাটোরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে শেরকোল এলাকায় তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নামেন। পরে চলন্ত ওই ট্রাকে ওঠার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে ট্রাকের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

চুয়াডাঙ্গা : বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের হাতিকাটা এলাকায় কৃষি বিভাগের হর্টিকালচার সেন্টারের একটি সরকারি পিকআপের ধাক্কায় রাজু আহমেদ (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছেন। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাজু আহমেদ হাতিকাটা গ্রামের ডাবলু হোসেনের ছেলে।

জামালপুর : দুপুরে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পুল্লাকান্দি ব্রিজের পূর্বপাশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ওয়াজ করুনী মামুন নামে দশম (১৬) শ্রেণির এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।
নিহত ওয়াজ করুনী মামুন উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সর্দারপাড়া গ্রামের ডা. আব্দুস সামাদের ছেলে। সে আজিজা কিন্ডারগার্টেনের দশম শ্রেণির ছাত্র।

বেনাপোল (যশোর) : দুপুর ১২টার দিকে শার্শা উপজেলার নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের বাগুড়ী এলাকায় ট্রাকের চাপায় লিটন আনছারী (৩২) নামে এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। তিনি আনছারী বাগআঁচড়া বাগুড়ী গ্রামের সিদ্দিক আনছারীর বড় ছেলে।

 
Electronic Paper