ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিষেধাজ্ঞার পরও লবণ আমদানির ঝোঁক!

নাজমুল হুসাইন
🕐 ১১:২৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯

দেশে সব মিলে বছরে প্রায় ২২ লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে খাবার লবণের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণে সক্ষম দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে লবণ চাষিদের সুরক্ষা দিতে খাবার লবণ আমদানিও নিষিদ্ধ রেখেছে সরকার। তারপরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ১১ লাখ টনেরও বেশি লবণ আমদানির জন্য পাঁয়তারা করছে সাত প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ দেশের বার্ষিক চাহিদার প্রায় অর্ধেক লবণই তারা আমদানি করতে চায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাবার হলেও শিল্প লবণ আমদানি নিষিদ্ধ নয়, আর ওই লবণ আমদানির ক্ষেত্রে কর খাবার লবণ থেকে অর্ধেকেরও কম। এ কারণে শিল্প খাতে ব্যবহারের প্রয়োজন দেখিয়ে আমদানির পর সেটা ভোক্তার কাছে বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। কারণ পরিশোধিত খাবার লবণ দেখতে পুরোপুরি শিল্প লবণের মতো। সেটাই অতিমাত্রার লবণ আমদানির ঝোঁকের প্রধান কারণ।

একদিকে শিল্প লবণ বাজারে ভোক্তার কাছে বিক্রি করলে সেটা পরিশোধনের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে এক কেজি শিল্প লবণ আমদানির খরচ স্থানীয় পরিশোধিত লবণের অর্ধেকেরও কম। সঙ্গে সরাসরি প্যাকেটজাত করা বেচে যাচ্ছে তাতে আয়োডিন, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপাদান মেশানোর খরচও। যাতে মুনাফা হচ্ছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি। যদিও এসব লবণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আর এসব লবণের কারণে লোকসান গুনছে দেশি পরিশোধনকারী কোম্পানি ও সাধারণ লবণ চাষিরা। তারা তাদের উৎপাদিত লবণের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

এ দফায় লবণ আমদানির জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি খাবার লবণ আমদানি করতে চায়। আর তিনটি প্রতিষ্ঠান চায় শিল্প লবণ আনতে। অন্যদিকে একটি প্রতিষ্ঠান শিল্প লবণ ইতিমধ্যে বন্দরে এনেছে, সেটাই খালাসের জন্য অনুমতির আবেদন করেছে। এদের মধ্যে গেটকো লিমিটেড ও শরিফ সল্ট ইন্ডাস্ট্রি যথাক্রমে ৫ লাখ টন এবং ২০ হাজার টন বোল্ডার লবণ (মোটা দানার খাবার লবণ), কবির আহম্মেদ সল্ট রিফাইনিং ইন্ডাস্ট্রি ৫০ হাজার টন লবণ আমদানির অনুমতি চেয়েছে। আর বন্দরে রয়েছে অ্যাপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিট মিলস্ লিমিটেড ৫৪ টন লবণ। আর তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেড ও সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লবণ আমদানির অনুমতি চাইলেও কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ উল্লেখ করেনি। পাশাপাশি পাঁচ টন খাবার লবণ মিল মালিকদের মধ্যে সমহারে আমদানির জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ আমদানি অনুমোদনের বিষয়টির যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান বলেন, আবেদনগুলো পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আমরা জানছি। তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) পাশাপাশি লবণ মিল মালিকদের প্রতিনিধি এবং চাষি কল্যাণ সমিতির মতামত নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, আমরা কখনো লবণ আমদানির পক্ষে নই। আমরা বলছি যদি আমদানির প্রয়োজন হয়ই তবে সেটা প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সমহারে আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত। বাজারে খাবার লবণ মিল মালিকরাই বিক্রি করবে সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু তিনি অভিযোগ করে বলেন, শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা কস্টিক সোডা প্রস্তুতের কথা বলে লবণ এনে সেটা সরাসরি বাজারে বিক্রি করছে। এতে যেমন সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর ভোক্তারা পড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের লবণ আমদানির সুযোগ দিলে সেটাই হবে।

 
Electronic Paper