আবজাল দম্পতির সম্পদ আরও
২৫টি বাড়ি-প্লট ও জমি জব্দ * রাজধানীর উত্তরাসহ পাঁচ স্থানে ক্রোকের নোটিস * নতুন সম্পদ থাকার ধারণা দুদকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদের যেন শেষ নেই। দুর্নীতির অর্থে গড়ে তোলা এই দম্পতির ২৫টি বাড়ি-প্লট ও জমি জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কে সাড়ে তিন কাঠা প্লটের ওপর নির্মিত ছয়তলা ‘তামান্না ভিলা’য় সম্পত্তি জব্দের প্রথম নোটিসটি লাগানো হয়। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম ওই বাড়ির মালিক। তবে হদিস পাওয়া এসব বাড়ি ও প্লট-ই শেষ নয়, তাদের আরও অনেক সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা দুদকের।
উত্তরায় নোটিস ঝোলানোর সময় আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম এবং উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশে আবজাল ও তার স্ত্রীর নামে থাকা অবৈধ সম্পদের ওপর ক্রোক আদেশের বিলবোর্ড লাগিয়ে যাচ্ছি। প্রথম দিন উত্তরায় তাদের দুটি বাড়ি ও দুটি প্লট এবং বাড্ডায় আরেকটি প্লটে এ ধরনের আদেশের বিলবোর্ড লাগানো হবে। পরে তাদের নামে থাকা অন্য সম্পত্তির ওপর পর্যায়ক্রমে বিলবোর্ড স্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।
আবজাল দম্পতির নামে থাকা যে ২৫টি বাড়ি ও প্লটের খোঁজ পেয়েছে দুদক, এর মধ্যে ১৫টি বাড়ি ও প্লট রয়েছে ঢাকায়। এসব সম্পত্তির ওপর বিলবোর্ড স্থাপন করতে সম্প্রতি তিন সদস্যের কমিটি করে দুদক। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত।
আবজাল, তার স্ত্রী রুবিনা খানম এবং তাদের ১৫ জন নিকটাত্মীয়ের অবৈধ সম্পদের খোঁজে গত ফেব্রুয়ারিতে মাঠে নামে দুদক। সুনির্দিষ্টভাবে ওই ১৭ জনের সম্পদের খোঁজ চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়। দুদক কর্মকর্তারা জানান, আবজালের যেসব সম্পদের তথ্য তাদের হাতে আছে, তার বাইরেও অনেক সম্পদ রয়েছে তাদের ধারণা। আবজালের জব্দ সম্পদের তালিকায় রয়েছে- ঢাকার মিরপুরে আড়াই কাঠা জমির ওপর টিনশেড বাড়ি, পল্লবীতে ছয় কাঠা জমি, উত্তরার ১৫/সি নম্বর সেক্টরে তিন কাঠা জমির ২৪ নম্বর প্লট, উত্তরার ১৫/সি নম্বর সেক্টরে তিন কাঠা জমির ২৬ নম্বর পল্ট, খিলক্ষেতে তিন কাঠা জমি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চার কাঠার প্লট, ফরিদপুরের কোতয়ালি পৌরসভা মৌজা এলাকায় সাড়ে ১০ শতাংশ জমিতে দোতলা বাড়ি, একই এলাকার রঘুনন্দনপুর মৌজায় সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি, জেলার পশ্চিম টেপাখোলা এলাকায় ১১৩ শতাংশ জমি, রাজবাড়ী জেলার বসন্তপুর ইউনিয়নে ২৩০ শতাংশ জমি, খুলনা সিটি করপোরেশনের খালিশপুর বয়রা মৌজায় সাড়ে ৫ কাঠা জমি ও একই সিটি করপোরেশনের মুজগুন্নি আবাসিক এলাকায় সাড়ে তিন কাঠার প্লট।
রুবিনার জব্দ সম্পদের তালিকায় রয়েছে- রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কে সাড়ে তিন কাঠা প্লটে ছয়তলা বাড়ি, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কে তিন কাঠা প্লটে ছয়তলা বাড়ি, ঢাকার মিরপুরে একটি টিনশেড বাড়ি, পল্লবীতে আড়াই কাঠা জমি, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের ৩০৬৭ নম্বর ব্লকে তিন কাঠার একটি প্লট, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের ৩০৬৬ নম্বর ব্লকে তিন কাঠার একটি প্লট, ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি মার্কেটে দোকান, ঢাকার সাভারে ১৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুর পৌরসভার হাবেলী গোলাপপুরে দোতলা বাড়ি, একই জেলার চর পশ্চিম টেপাখোলা এলাকায় আট শতাংশ জমি, জেলার একই এলাকায় নয় শতাংশ জমি এবং জেলার একই এলাকায় সাড়ে পাঁচ শতাংশের আরেকটি জমি।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়, এসব সম্পত্তির বাইরে আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি বাড়ি রয়েছে। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দুই লাখ ডলারে তারা বাড়িটি কিনেছেন। এছাড়া তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ জমা আছে।