ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

তবুও কথা রাখেনি ওরা

জাফর আহমদ
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯

সরকারি-বেসরকারি মিলে ২৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। ডিসেম্বর প্রান্তিকে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ৩০টি। এসব ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল। সে সময় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জানুয়ারি মাস থেকে তারা কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াবে। কিন্তু ৩০টির মধ্যে ২৫টি ব্যাংকই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২ ভাগ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। সে অনুযায়ী চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করার কথা ৯ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করার কথা ৫৮১ কোটি টাকা। এবং দেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করার কথা ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। গ্রামে শহরের সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রামে অর্থ সরবরাহ ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে কৃষকের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজের পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি পাঁচ মাসে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষমাত্রা পূরণে করতে পারেনি ২৫ বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ২টি, বিদেশি ব্যাংক ৩টি এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ২০টি ব্যাংক লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি। ২৫টি ব্যাংকের মধ্যে আদৌ যারা কৃষিঋণ বিতরণ শুরু করেনি সে সব ব্যাংকগুলো হলো-বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও উরি ব্যাংক। এ ছাড়া দেশি মধুমতি ব্যাংক। এর মধ্যে বেসরকারি মধুমতি ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে কোনো কৃষিঋণে লক্ষ্যপূরণ করছে না।

লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ অন্য ব্যাংকগুলো হলো-দেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক এবি ব্যাংক, আল আরাফা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ও রূপালী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, কৃষকদের মাঝে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৪০ হাজার ৩০৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বিতরণ করা মোট এ ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা মোট ঋণের ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একক ব্যাংক হিসাবে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের পরিমাণ সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণও বেশি। ব্যাংকটির কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৯৩৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩০৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা মোট কৃষি ঋণের ২২ শতাংশ। এরপরেই ১৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের প্রায় পুরোটাই খেলাপি। দেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ উত্তরা ব্যাংকের। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ব্যাংকটির মোট ২৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা কৃষিঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক খোলা কাগজকে বলে, আপাতত ঋণ বিতরণ না করা হলেও বছরের এখনো পাঁচ মাস বাকি আছে। বাকি সময়ে অনর্জিত লক্ষ্য পূরণ করা হবে। সারা বছর সমান হারে বিতরণ না করে শেষের দিকে সব ঋণ একসঙ্গে বিতরণ করা মান রক্ষা হয় না। এবং কৃষকের কাছে না পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই সারা বছর সমান হারে কৃষকের মাঝে ঋণ বিতরণ করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

 
Electronic Paper