অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে দেশবাসীকে সর্তক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৪২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে দেশবাসীকে সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় পুরান ঢাকার সরু রাস্তা প্রশস্ত করেত দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরান ঢাকার সরু রাস্তা, গলি নতুন করে করতে হবে। রাস্তাগুলো এত সরু যে সেখানে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার কোনও উপায় নেই।’
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইন্সটিটিউটে আগুনে দগ্ধদের দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে সকাল ১০টা ২৫মিানটে বার্ন ইউনিটে প্রবেশ করে দগ্ধ ও আহতদের দেখে বেলা ১১টার দিকে বেরিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি রোগীদের খোঁজ-খবর নেন এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া ডাক্তাদের সঙ্গেও রোগীদের অবস্থা নিয়ে কথা বলছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় রোগীদের বলেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে। রোগীরা সুস্থ হলে তাদের পুনর্বাসনের চিন্তাও করছে সরকার।
এছাড়াও ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, করেছেন। রোগীরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেটাও দেখবেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন, প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় এমপি হাজী মো. সেলিম, অধ্যাপক ডা. সামন্তলাল সেন উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুরান ঢাকায় এত গলি যে, আমরা হেলিকপ্টার দিয়েও পানি দিতে পারিনি। এটাও খেয়াল রাখতে হয়েছে যে হেলিকপ্টারের বাতাস থেকেও আগুন ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্ব থেকে হেলিকপ্টারে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
ঢামেকে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে প্রধানমন্ত্রী আগুন ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কেমিক্যাল গুদামগুলোকে দায়ী করে বলেন, ‘আমরা মোবাইল কোর্ট বসিয়ে অনেক কারখানা অপসারণ করেছি। কিন্তু সেগুলো গড়ে উঠেছে। এগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। ২০০৯ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরাতে চেয়েছিলাম। তার জন্য কেরানীগঞ্জে জায়গা করে প্রজেক্ট নিয়েছিলাম। আধুনিক গুদাম তৈরি করে দিতে চেয়েছিলাম। এসব কেমিক্যালের সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। কিন্তু মালিকরা রাজি হয়নি, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।’
তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে ফেলতে উদ্যোগ নেয়ার পরেও তা না সরানো দুঃখজনক। তবে এ ঘটনার (চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড) পর এখানে আর রাসায়নিকের ব্যবসা করতে দেয়া যাবে না। এই ঘনবসতির এলাকায় যেন আর রাসায়নিক ব্যবসা না থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাংবাদিকদের কারণে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবাদ কর্মীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আগুন নেভানো ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে টিভি সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। এটা কী প্রশ্ন করার সময়? উত্তর আশা করেন কীভাবে? তারা কাজে যাবেন। অথচ তাদের আটকে রেখে প্রশ্ন করা হচ্ছে।’
এছাড়াও আগুন ও তাতে দগ্ধদের ছবি তোলার বিষয়ে সংবাদকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে।’
ঢামেকে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী আগুন নেভানোর জন্য পানির উৎসের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় এক সময় অনেক পুকুর ছিল সেগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এক সময় পুরান ঢাকার ধোলাই খাল ও আশপাশে অনেক খাল ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেগুলো দখল হয়ে গেছে, স্থানীয়রা ভরাট করে ফেলার কারণে ওই এলাকায় দুর্ঘটনার সময় পানি পাওয়া যায় না। নেভানোর সময় যদি পানি না পাওয়া যায়, তাহলে ফায়ার সার্ভিসের কী করার আছে?’
এছাড়াও আগামীকাল রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অফিস খুললে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনে হতাহতদের জন্য রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এটা একটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা যা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করেছে।’