তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে নিখোঁজের
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ১০:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও, হতাহতের মিছিলে হিসাব মেলেনি নিখোঁজ অনেকের। সময় যত বাড়ছে নিখোঁজের তালিকাও তত দীর্ঘ হচ্ছে। নিখোঁজের তালিকা তৈরিতে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন বিভাগ।
নিখোঁজের তালিকা তৈরিতে নিয়োজিত রেড ক্রিসেন্টের ফিল্ড অফিসার শাকিলা আক্তার খোলা কাগজকে জানিয়েছেন, তাদের হিসাবে এখনো ৬৯ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু তথ্যগত গরমিল রয়েছে। এক ব্যক্তির একাধিকবারও নাম এসেছে। আমরা ক্রসচেক করে দেখছি।’
দুর্ঘটনার পর অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ায় পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা মরিয়া হয়ে খুঁজছেন নিখোঁজ প্রিয় মানুষকে। পরিবারের লোকজন পুড়ে যাওয়া লাশ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে না পেরে শেষ ভরসা রাখছেন ডিএনএ টেস্টে। অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে অবস্থান করা কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী সালেহ মাহমুদ লিপু (৪৪), তার স্ত্রী নাসরিন জাহান (৩৫) ও একমাত্র সন্তান সাত বছরের মাসিয়কে খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। প্রিয় সন্তানকে ফিরে না পেলেও, সন্তানের মৃতদেহ ফিরে পেতে চাই তারা। ডিএনএ টেস্ট করতে লিপুর বাবা লাল মিয়া ও নাসরিন জাহানের মা কহিনুর বেগম এসেছিলেন মর্গে। তারা গণমাধ্যম কর্মীদের নিখোঁজ তিনজনের ছবি দেখিয়ে প্রিয় মানুষদের ফিরে পেতে আকুতি জানান।
নিখোঁজ আরেকজন চকবাজারের প্যাকেজিং ব্যবসায়ী হাজি সাজু ওসমানের খোঁজে এসেছিলেন তার পরিবার। সাজু ওসমানের ছেলে সোরহাব জানান, আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাজু ওসমানের মোবাইলে ফোন করতে শুরু করেন সোহরাব ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু তখন থেকেই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বার্ন ইউনিট খোঁজ নেন। মর্গে ৬৭ জনের লাশ পাওয়া গেলেও এখনো মেলেনি সোহরাবের বাবা সাজু ওসমানের লাশ। তাই পুড়ে যাওয়া মরদেহ থেকে বাবার লাশ শনাক্ত করতে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসেন সোহরাব। নোয়াখালীর জাফর আহাম্মদের (৪৫) খোঁজে এসেছেন তার পরিবার। তারাও ডিএনএ টেস্ট করেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এইচ এম সালাউদ্দীন মনজু খোলা কাগজকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস থেকে আমরা ৬৭টি মৃতদেহ পেয়েছি। ৪৬ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের হস্তান্তর করেছি। যেগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ঢাকা মর্গসহ বিভিন্ন হাসপাতালের ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা করেছি। ২১টি লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ জেলা প্রশাসকের তথ্য কেন্দ্রে এখনো নিখোঁজ মানুষের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
চকবাজার অগ্নিকা- অনুসন্ধানে সরকার পাঁচটি তদন্ত টিম গঠন করেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান ও ভবিষ্যতের করণীয় নির্ধারণবিষয়ক তদন্ত টিমের সদস্য হারুন-অর রশিদ (অতিরিক্ত সচিব, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়) খোলা কাগজকে জানিয়েছেন, আহত নিহত ও নিখোঁজের তালিকা তৈরিতে তার টিম কাজ করছেন। তবে নিখোঁজের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো তাদের হাতে নেই।