ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাড়াজাগানো ‘লেখক বলছি’

শফিক হাসান
🕐 ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯

মঞ্চে লেখক তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বলছেন, অন্যদিকে তার পাঠক, ভক্ত ও অনুরাগীরা তা শুনছেন এবং নানামাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্ন করছেন- সাহিত্যের সুষ্ঠু বাতাবরণ সৃষ্টিতে এটি সহায়ক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর বইমেলায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির ‘লেখক বলছি’ উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিনই থাকছে এ আয়োজন। এতে অংশ নিচ্ছেন খ্যাতনামা এবং প্রতিশ্রুতিশীল লেখকরা। বুধবার এ আয়োজনে অংশ নিয়ে নিজেদের নতুন প্রকাশিত বই বিষয়ে কথা বলেন লেখকরা। আলোচনায় অংশ নেন লেখক মাসুদুজ্জামান, মুজতবা আহমেদ মোরশেদ, প্রশান্ত মৃধা, শীলা মোস্তফা এবং প্রত্যয় জসীম।

শুধু প্রিয় লেখকদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়াই নয়, মেলার শেষ দিকে এসে পছন্দের বই সংগ্রহ করেছেন মেলায় আগতরা। কয়েকজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গতকালের বিক্রিতে সন্তুষ্ট। গতকাল মেলায় এসেছে ১৩৮টি নতুন বই।

মহসীন হাবিবের বই ‘দণ্ডিত নাস্তিক’ : বেহুলাবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বিশিষ্ট সাংবাদিক মহসীন হাবিবের ‘দণ্ডিত নাস্তিক’। বই প্রসঙ্গে লেখক বলেন, ‘পশ্চিমা মনীষীদের অনেকেই মনে করেন, শাহাব আল সুরাওয়ার্দি ছিলেন মুসলিম জগতের সবচেয়ে মেধাবী দার্শনিক। ইবনে সিনার অনুসারী এবং সমালোচক সুরাওয়ার্দিকে কীভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল; জন হাসকে হত্যার পর কীভাবে ইউরোপে হাসিজম আন্দোলন শুরু হয়েছিল, কীভাবে সক্রেটিসকে পদে পদে নিগৃহীত করা হয়েছে মৃত্যুর আগে, কেন এবং কীভাবে হত্যা করা হয়েছে উস্তাজ মোহাম্মদ তাহাকে, লুসিলিও ভ্যানিনি, মিশেল সারভেতাসের মতো অসাধারণ মেধাবীকে, পোল্যান্ডের প্রগতিশীল চিন্তার প্রতীক কাজিমির লিৎঝিনিস্কিকে- এমন ১৪ জন দণ্ডিতকে নিয়ে বর্ণনা করতে চেষ্টা করেছি ‘দণ্ডিত নাস্তিক’ গ্রন্থে।’


সারা বছরই বই প্রকাশ করা উচিত
মশিউল আলম
কথাসাহিত্যিক
বইমেলা একটা উৎসব, সমাজে তো উৎসবের গুরুত্ব থাকেই। একুশের বইমেলা বই নিয়ে সবচেয়ে বড় উৎসব। যারা বই লেখেন এবং পড়েন, এটা তাদের খুব প্রিয় উৎসব। তবে আমি মনে করি, একুশের বইমেলা উপলক্ষে বই লেখা ও প্রকাশ করার প্রবণতার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সারা বছরই বই প্রকাশ করা উচিত, বই কেনাও।

বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশনার ভবিষ্যৎ কী, আমি জানি না। কারণ মানুষের পড়ার মাধ্যম ও অভ্যাস বদলে যাচ্ছে বেশ দ্রুত। কাগজের বইয়ের জগৎ হয়তো সঙ্কুচিত হয়ে আসবে।

এবারে বইমেলায় আমার তিনটি গল্পের বই বেরিয়েছে। ১. নির্বাচিত গল্প, ২. বাংলাদেশ ও অন্যান্য গল্প, ৩. ব্লগার ও অন্যান্য গল্প। বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘নির্বাচিত গল্প’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী সব্যসাচী হাজরা। ২৮টি বাছাই করা গল্প নিয়ে এ বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৪৩২। পাওয়া যাচ্ছে মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বাতিঘর’-এর ১২১-১২২ নম্বর স্টলে। দাম ৮০০ টাকা।

মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ ও অন্যান্য গল্প’। ৮টি বিচিত্র রকমের গল্প নিয়ে এ বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ। দাম ২০০ টাকা। মেলায় মাওলা ব্রাদার্সের ১৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে।

১০টি গল্প নিয়ে বই ‘ব্লগার ও অন্যান্য গল্প’ প্রকাশ করেছে প্রথমা। ১৩৫ পৃষ্ঠার বইটির দাম রাখা হয়েছে ২৮০ টাকা। শিল্পী সব্যসাচী হাজরার প্রচ্ছদে বইটি মেলায় পাওয়া যাচ্ছে প্রথমা প্রকাশনের ৮ নম্বর প্যাভিলিয়নে।


পেশাদার প্রকাশক হারিয়ে যাচ্ছে

ওসমান গনি
প্রকাশক, আগামী প্রকাশনী
এবারের বইমেলা একটু ভিন্ন, বিন্যাসের দিক থেকে ভালো। বাংলা একাডেমির বইমেলা বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। এটা যেমন সত্য, আবার অমর একুশে বইমেলায় এখন বইয়ের নামে আবর্জনা প্রকাশে উৎসাহিত করছে। যারা ভুইফোঁড় প্রকাশক এবং মৌসুমি প্রকাশক- এদের ভিড়ে পেশাদার প্রকাশকরা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রকাশক এবার মেলার পূর্বদিকে অনেক খারাপ জায়গায় স্টল পেয়েছে। একই পরিণতি আগামী প্রকাশনীরও। যে জায়গায় আমাদের থাকার কথা নয়, সেখানে জন্য জন্য স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক। পেশাদার প্রকাশকদের যদি গুরুত্ব দেওয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এ বইমেলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। খারাপ বইয়ের জঞ্জালে এ বইমেলা থেকে যে সমস্ত বই বের হবে সেগুলো থেকে মানুষ উপকৃত হবে না বরং বইমেলার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

আগামী প্রকাশনী থেকে এ বছর সর্বসাকুল্যে ১০০ বই প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৫টি বই ইতোমধ্যে চলে এসেছে। আমার দৃষ্টিতে মেলার শ্রেষ্ঠ বইটি আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। বইটির নাম শিল্পকলার নান্দনিকতা, লেখক হাসনাত আবদুল হাই। আমরা মনে করি, আগামী প্রকাশনীর সব বই-ই উল্লেখযোগ্য। প্রকাশকের দৃষ্টিতে কোনোটিকেই বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এর মধ্য থেকেই উল্লেখ করতে পারি- বীরের এ রক্তস্রোত মাতার এ অশ্রুধারা, লেখক ড. রফিকুল ইসলাম; মোনায়েম সরকার সম্পাদিত একুশের নির্বাচিত প্রবন্ধ, ড. এম আব্দুল আলীমের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে এই প্রথম একটি বই বেরোলো। ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে সৈয়দ জাহিদ হাসানের লালনগুরু সিরাজ সাঁইয়ের গান; সৈয়দ মিজানুর রহমান সম্পাদিত নেতৃত্বে ছাত্রলীগ : ইতিহাসের অকাট্য দলিল। আরেকটি বই হচ্ছে মুক্তিসংগ্রামসমগ্র, লেখক আব্দুল মুকিত চৌধুরী।

খোলা কাগজকে ধন্যবাদ, প্রতিদিন একজন প্রকাশকের আলাপচারিতা প্রকাশ করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা প্রকাশনা শিল্পের অগ্রগতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। খোলা কাগজের প্রতি আমাদের- প্রকাশকদের গভীর কৃতজ্ঞতা।

 
Electronic Paper