বিত্তবৈভব করতে গেলে পচে যাবেন
মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:১৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
নতুন মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কড়া বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘অনেক আলোচনা-সমালোচনার পরও আপনাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমি মন্ত্রিসভা করেছি। আপনাদের ওপর আমার এই আস্থা রাখা যে সঠিক ছিল তা আপনারা সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করে প্রমাণ করবেন। আর যদি তা না পারেন, তাহলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা সততা রেখে চলবেন। বিত্তবৈভব অনেক করতে পারবেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে চিরদিনের জন্য পচে যাবেন।’
গতকাল সোমবার নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আপনাদের আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের প্রতি, কাজেই সেই প্রত্যাশা পূরণ করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে আকাক্সক্ষা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল, আমাদেরও সেই আকাঙ্ক্ষা। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করব। একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছেন, আমার দাদা তাকে যে কথাটা বলেছিলেন- ‘যে কাজই কর না কেন, সিনসিয়ারিটি অব পারপাস অ্যান্ড অনেস্টি অব পারপাস।’ আমি মনে করি, এ দুটি কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্ত্রিপরিষদ এ কথাটি মনে রেখে যে কাজই করবেন, নিষ্ঠার সঙ্গে ও সততার সঙ্গে কাজ করবেন। প্রতিটি কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে-এ কথাটি মনে রাখতে হবে। জনগণের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব, কর্তব্য রয়েছে- সেটা পালন করতেই আমরা এখানে এসেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততার শক্তি অপরিসীম, সেটা আমরা বারবার প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলেই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে এবং যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি সেটা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
বৈঠকের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশরাফকে ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি। কামালের (বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল) অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ছাত্রলীগ করত।’ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর প্রবাসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা এবং পরে দেশে এসে সৈয়দ আশরাফের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন, তার খসড়া অনুমোদনসহ কয়েকটি আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
তিনি জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ আইন)-২০১৮ এর খসড়া, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র আইন, চিটাগং হিলট্র্যাকস (ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন, রেগুলেশন) অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের খসড়া বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালার আলোকে প্রতিবন্ধীবিষয়ক জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।