এত খাদ্য তবুও মূল্যবৃদ্ধি!
জাফর আহমদ
🕐 ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০১৯
বাজারে পর্যাপ্ত চাল আছে। আমদানিও বেশি। সরকারের গুদামেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাল আছে। তারপরও বাজারে বেড়েছে চালের দাম। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দাম বৃদ্ধির কোনোই কারণ নেই। অদৃশ্য কোনো কারণে চালের দাম বেড়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, উদ্যোগ নেওয়ায় চালের দাম কমেছে। তবে বাজারে এখনো বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে বাজার ভেদে ৫৭ টাকা। বিআর-আঠাশ (মধ্যম মানের) চালের কেজি ৪৪ থেকে বাজার ভেদে ৪৭ টাকা। আর মোটা চালের কেজি বাজার ও ধরন ভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। গত কয়েকদিনে এ সব চালের কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছিল। মন্ত্রীর উদ্যোগের ফলে কেজি প্রতি এক থেকে বাজার ধরন ভেদে ২ টাকা কমেছে। তারপরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।
চাল আমদানি ও উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এখন চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুদ আছে। উৎপাদনও সন্তোষজনক। গত বছর আউস, আমন ও বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ৩৫ লাখের বেশি উৎপাদন হয় গম ও ভুট্টা। সব মিলে দেশেই খাদ্য উৎপাদন হয় ৪ কোটি মেট্রিক টন। এর বাইরে চাল ও গম মিলে আমদানি হয় প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন। তারপরও চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছে না খোদ সরকারই। এ ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, খাদ্য যথেষ্ট আছে। এ মুহূর্তে চালের মূল্য বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। মজুদদাররা কারসাজি করে চালের দাম বৃদ্ধি করতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছিল।
উদ্যোগ নেওয়ার পরও চালের মূল্য পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি-এ বিষয়ে কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে দাম কিছুটা কমেছে। আরও কমবে। সরকারের পর্যবেক্ষণে আমরা যা পাচ্ছি তাতে চালের দাম সহনশীল আছে। সরকারের পক্ষে থেকে বাজারে চালের দাম পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি কৃষকরাও যাতে দাম পায় সেদিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ দেখা যায়, বাজারে সারা দেশের মোটা চালের গড় মূল্য ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। মধ্যম মানের চালের কেজি ৪৫ টাকা ২৩ পয়সা এবং চিকন চালের কেজি ৫৪ টাকা ৪৯ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২ লাখ ১৬ হাজার ১০৬ টন। এ চালের মধ্যে চিকন মধ্যম মানের ও মোটা চাল রয়েছে। এসব চালের প্রতিকেজি গড় আমদানি মূল্য ৩৪ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে চাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৭৫৭ মেট্রিক টন। এ চালের বেশির ভাগ চিকন চাল। এ চালের গড় আমদানি মূল্য ৩৪ টাকা। এ চালের প্রায় পুরোটাই বাজারে প্রবেশ করেছে গত ছয় মাসের মধ্যে। এদিকে সরকারের গুদামে মজুদ খাদ্যের পরিমাণ হলো ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৩১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল মজুদ আছে ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন। এবং গমের মজুদ আছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৯ মেট্রিক টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদই স্বাভাবিক। সেখানে সরকারের খাদ্য মজুদ আছে ১৪ লাখ মেট্রিক টনের উপরে।
খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে চালের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিআইডিএসের গবেষক ড. আসাদুজ্জামান। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, এখন আমন ধান উঠার মৌসুম চলছে। আমনের উৎপাদনও বেশি হয়েছে। সরকারও একই আছে। তাহলে কেন চালের দাম বাড়বে-এটা বোধগম্য নয়।