ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফাঁড়া কাটল ডিএনসিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯

ফাঁড়া কেটেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া মেয়র পদ ও সম্প্রসারিত ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচনে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে নির্বাচন বাতিল বিষয়ে জারি করা রুল এবং খারিজ করা হয়েছে রিটকারীর আবেদন।

রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গতকাল বুধবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সংক্রান্ত আদেশ দেন। এ আদেশের মধ্য দিয়ে ডিএনসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা কেটে গেল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। আদালতের শুনানির সময় রিটকারীদের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী মইনুল হোসেন।

রিট খারিজের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখন এ আদেশের বিরুদ্ধে রিটকারীদের আপিল করার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা চাইলে খারিজ আদেশটি পুনরায় উত্থাপনের আবেদন জানাতে পারবেন। এ আদেশের পর ডিএনসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর কোনো আইনি বাধা নেই।’

নির্বাচন বাতিল চেয়ে রিটকারী ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভুঁইয়া আদালতে উপস্থিত না থাকলেও টেলিফোনে জানিয়েছেন, তার মক্কেল মামলাটি পরিচালনা করতে আর আগ্রহী নন। সে জন্য তারা এ নিয়ে আর এগোননি। ফলে আদালত ডিসচার্জ অব ডিফেন্স (ডিডি) অর্ডার দিয়েছে।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উত্তরে আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকন বিজয়ী হন। নির্বাচনের মাত্র আড়াই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক। এর পর ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর ডিএনসিসির মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র পদে উপনির্বাচন, দুই সিটিতে সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের কথা ছিল ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি।

এর মধ্যেই ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি তফসিলের কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তাদের আবেদনের ওপর শুনানি করে গত বছর ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্বাচন ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে দেন। একই সঙ্গে ওই নির্বাচনের তফসিল কেন ‘আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করা হয়। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ইসি আপিল বিভাগে গেলে সেখানে হাইকোর্টের দেওয়া রুল ‘দ্রুত নিষ্পত্তির’ আদেশ আসে। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।

জটিলতা শুরু যেখানে
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত ১৬টি ইউনিয়নকে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর ফলে ঢাকা উত্তরে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ড হয় ৫৪টি। আর দক্ষিণে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ড হয় ৭৫টি। ১৬ ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত করার পর থেকেই কয়েকটি ইউনিয়েনের জনপ্রতিনিধিরা সীমানা বণ্টন নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এমনকি সীমানা বণ্টনের ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত বলেও দাবি করেন। বিশেষজ্ঞদের তরফ থেকেও আশঙ্কা করা হয়েছিল, ইসির এ সীমানা বণ্টন নিয়ে কেউ অসন্তুষ্ট হলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারে এবং তাতে নির্বাচন অনুষ্ঠান বাধাপ্রাপ্ত হবে। দুই সিটির ৩৬ নতুন ওয়ার্ডের ভোটাররা ভোটবঞ্চিত হতে পারে বলেও আশঙ্কা ছিল বিশেষজ্ঞদের। হলোও তাই।

তবে টানা এক বছর আদালতে ঝুলে থাকার পর ডিএনসিসি নির্বাচনের দরজা খুলে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল আদালতের সিদ্ধান্ত চাউর হওয়ার পর থেকে রাজধানীবাসীর মুখে মুখে ছিল ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশার ফুলঝুরি। দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আশা করেন অনেকেই।

মার্চে নির্বাচনের ইঙ্গিত
এদিকে আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পরপর আগামী মার্চ মাসে ডিএনসিসি নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। গতকাল বিকালে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, মার্চে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদের মাঝেই এ নির্বাচন করা হবে। তবে এ বিষয়ে কমিশনে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে পুনঃতফসিল করতে হবে। বসতে হবে সবার সঙ্গে। এ নির্বাচন তাড়াতাড়ি করে ফেলব। উপজেলা নির্বাচনের মাঝেই করে ফেলব। উপজেলা নির্বাচন সিটি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 
Electronic Paper