ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চাল সিন্ডিকেটে অসহায় ক্রেতা

সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯

উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো থাকার পরও বেড়েছে চালের দাম। গত একসপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ থেকে ৪ থেকে টাকা পর্যন্ত। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। দাম বৃদ্ধির জন্য মিলমালিকরা দূষছেন আড়তদার-ব্যবসায়ীদের আর ব্যবসায়ীরা জানালের রাস্তায় চালের ট্রাকে চাঁদাবাজি ও খুচরা বিক্রেতাদের সরকার মনিটরিং না করায় চালের বাজারের এই অবস্থা।

ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম হঠাৎ বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কুষ্টিয়া ও দিনাজপুরের মোকামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন বছরের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে চালের দাম। মনপ্রতি ধানের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়লেও চালের দাম বেড়েছে ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ টাকার বেশি। চাল মিলমালিক বগুড়া শাখার সভাপতি এটিএম আমিনুল ইসলাম গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, বগুড়ায় মোটা চালের দাম বাড়েনি। আমরা এখনো সরকারকে ৩৬ টাকায় চাল দেই। তবে ঢাকায় চিকন চালের দাম বেড়েছে শুনেছি। কী কারণে বেড়েছে তা বলতে পারব। আমার কাছে মনে হচ্ছে কোনো কারণ ছাড়াই চিকন চালের দাম বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে মিল থেকে চিকন চাল ৪৬ কিংবা ৪৭ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। সেই চাল ঢাকায় গিয়ে ৫৫-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা তো হওয়ার কথা নয়। এটা আড়তদার বা ব্যবসায়ীরাই বলতে পারবে। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে খাদ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, মিল মালিকরা বলেছেন ৪৬-৪৭ টাকায় চিকন চাল সরকার কত চায় আমরা দিতে পারব। চালের দাম বাড়ার কথা নয়। চাল বাড়ার জন্য তারা দায়ী নয়। তিনি বলেন, মিলমালিক থেকে শুরু করে খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত তিন চার জায়গায় এই চাল হাত বদল হয়। মূলত এসব জায়গায়ই দামটা বাড়ে। তিনি বলেন, চাল বৃদ্ধির জন্য আড়তদাররা বা তাদের সিন্ডিকেট দায়ী।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি এনামুল হক গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরকার বলছে তাদের কাছে পর্যাপ্ত চাল আছে। চাল সরকারের কাছে থাকলেও ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত চাল নেই, তাই চালের দাম বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, এখন নতুন একটি ফসল উঠতেছে, যে কারণে চালের দাম একটু বাড়ছে। এনামুল হক আরও বলেন, তাছাড়া সরকার আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। যে কারণে আমদানিও কম হচ্ছে। আর আমরা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চল থেকে চাল আনার সময় ট্রাক ড্রাইভাররা বলছেন তাদের রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া খুচরা যারা চাল বিক্রি করেন তাদের ওপর সরকারের নজরদারি কম থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চালের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী মিল মালিকদের এমন অভিযোগের জবাবে এনামুল হক বলেন, এটা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আগে উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে একটি ট্রাকে ২৫-৩০ টন চাল আনতে পারতেন আর এখন ১২ টনের বেশি আনলে রাস্তায় ওজন পরিমাপক যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করে ট্রাক আটকে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারণে ক্যারিং খরচ বাড়ছে। যে কারণে মূলত চালের দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমরা পাইকাররা ৫০ কেজির একবস্তা চালে ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ করি। কিন্তু যারা খুচরা বিক্রেতা, যারা ৫ কেজি ১০ কেজি চাল বিক্রি করেন তারাই মূলত চালের দামটা বাড়াচ্ছেন। তাদের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়াতে হবে।    
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, নতুন করে মজুদ শুরুর আগে সরকারি গুদামে চাল ও গমসহ ১২ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল।  যার মধ্যে ৯ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ছিল চাল।
হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানায়, চাল আমদানিতে শুল্ক হার বাড়ার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি অনেক কমেছে। ১ জানুয়ারি ২৭টি ট্রাকে ৬৭৫ টন চাল, ২ জানুয়ারি ১৯টি ট্রাকে ৪৭৫ টন চাল, ৩ জানুয়ারি ১২টি ট্রাকে ৩০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। এভাবে গত তিন দিনে বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৪৫০ টন চাল আমদানি হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে চালের দাম খুব বেশি বেড়েছিল ২০১৭ সালের মধ্যভাগ থেকে কয়েক মাস ধরে। ওই বছর এপ্রিলে আগাম বন্যায় হাওরের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। সে সময় সরু চালের দাম খুচরায় কেজি প্রতি ৭০ টাকা পর্যন্ত ওঠে, সমানতালে বাড়ে মোটা চালের দামও। পরে নতুন ধান ওঠায় চালের দাম কমে আসে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে চালের উৎপাদন এবং মজুদ যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে তাই চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সা¤প্রতিক সময়ে নির্বাচনের কারণে চিকন চালের দাম কিছুটা বাড়লেও মোটা চালের দাম বাড়েনি। আর অযৌক্তিক কারণে ব্যবসায়ীরা যাতে চালের দাম না বাড়ান সেজন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। রাজধানীর খাদ্য অধিদপ্তরে এক মতবিনিময় সভায় দুই মন্ত্রী এসব কথা বলেন। নির্বাচনের পর হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খাদ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী। চালের দাম বাড়া নিয়ে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে সভায় মিল মালিকরা অভিযোগ করেন।

 
Electronic Paper