মাদকবিরোধী অভিযান
কক্সবাজারের ইয়াবা ফাদাররা টার্গেটে
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৮
কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসার যে ক’জন পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদার রয়েছেন তারা সবাই প্রভাবশালী। অধিকাংশ গডফাদার সব সময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইয়াবা গডফাদাররা সরাসরি ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত না থাকায় তাদের অনেকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
নিজের বা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গডফাদাররা ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এবার ইয়াবার গাডফাদাররা পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেটে।
গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ রোডে তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার আক্তার কামালের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন অধিকাংশ ইয়াবা গডফাদার। আক্তার কামালের পরিবারের দাবি, র্যাব পরিচয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা প্রণয়ন করেছে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা। এই তালিকার অধিকাংশ গডফাদার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা বা জনপ্রতিনিধির আশীর্বাদপুষ্ট।
সরকারি সংস্থার তালিকা অনুযায়ী কক্সবাজার শহরের ইয়াবার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেন- শাহাজাহান আনসারী, পিতা- আনসারী।
এছাড়াও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কক্সবাজার শহর থেকে যে নামগুলো রয়েছে- কাউন্সিলর মিজানুর রহমান (২ নং ওয়ার্ড)। আবু নফর (রোহিঙ্গা নফর হিসেবে পরিচিত), পিতা- মো. সুলতান। আবুল কালাম প্রকাশ ইয়াবা কালাম প্রকাশ কন্ট্রাক্টর কালাম, পিতা- লালু। ইয়াবার রাজধানী টেকনাফের ইয়াবার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন হাজি সাইফুল করিম (৩৮)। তিনি টেকনাফের শীলবনিয়াপাড়ার ডা. হানিফের ছেলে। বর্তমান ঠিকানা- ভিআইপি টাওয়ার, কাজীর দেউরি, চট্টগ্রাম।
এছাড়াও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- মো. আবদুস শুক্কুর (৩৮), পিতা- মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানী (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই), সাং- অলিয়াবাদ, পোস্ট অফিস ও থানা টেকনাফ, কক্সবাজার।
আবদুল আমিন (৩৫), পিতা- মৃত. এজাহার মিয়া কোম্পানী (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই)।
মো. নুরুল হুদা (৩৫), ইউপি সদস্য, মোস্তাক মিয়া (৩৪), পিতা- জাফর আহমদ চেয়ারম্যান। দিদার মিয়া (৩২), পিতা- জাফর আহমদ চেয়ারম্যান। মো. শাহজাহান (৩০), টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও টেকনাফ উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি, পিতা- জাফর আহমদ চেয়ারম্যান। সাহেদুর রহমান নিপু (২৪), পিতা- ওসি আবদুর রহমান (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাগিনা)। মো. আমিন (৩৭), পিতা- কালা মোহাম্মদ আলী। নুরুল আমিন (৩৪), পিতা- কালা মোহাম্মদ আলী।
মৌলভী মুজিবুর রহমান (৩৪), পৌর কাউন্সিলর, পিতা- মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানী (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই)। মো. সফিক (২৩), পিতা- মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানী (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই)। মো. ফয়সাল (২০), পিতা- মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানী (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই)।
এনামুল হক (২০), ইউপি সদস্য, পিতা- মৃত মোজাহের মিয়া। মো. একরাম হোসেন (৩০), পিতা- হাজি ফজল আহম্মদ।
আবদুর রহমান (২৭), পিতা- হাজি ফজল আহম্মদ। ছৈয়দ হোসেন মেম্বার (৪২), পিতা- মৃত কালা মিয়া (প্রকাশ নাগুরা)।
শামসুল আলম মার্কিন (৪৭), পিতা- মৌলভী মো. আলী হোসেন।
আক্তার কামাল (৩৬) ইউপি সদস্য, পিতা- মৃত নজির আহমদ মেম্বার (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বেয়াই)।
শাহেদ কামাল (৩০), পিতা- মৃত নজির আহমদ মেম্বার, (সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির বেয়াই)। মৌলভী আজিজ (৪০), বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান। সভাপতি, বাহারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ।
মৌলভী রফিক উদ্দিন (৪০), ভাইস চেয়ারম্যান, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ। হাবিব উল্লাহ হাবিব (৩৫), পিতা- মোহাম্মদ হোসেন। মৌলভী বশির প্রকাশ ডাইলা (৪৪), পিতা- মৃত সুলতান আহমদ। মৌলভী বোরহান (৪৬), পিতা- মৃত মৌলভী হান্নান।
শাহ আলম (২৮), পিতা- মৃত নুরুল ইসলাম (প্রকাশ দেবাল্যা)। জিয়াউর রহমান, পিতা-হাজি মো. ইসলাম।
আবদুর রহমান (২৬), পিতা- হাজি মো. ইসলাম। মোজাম্মেল হক (২৫), পিতা- মৃত আবদুল গফ্ফার।
জোবাইর হোসেন (৩৩), পিতা- ওসমান গণি। নুরুল বশর প্রকাশ নুশ্সাদ (৩০), পৌর কাউন্সিলর ও যুগ্ম-আহ্বায়ক টেকনাফ পৌর যুবলীগ। কামরুল হাসান রাসেল (৩২), পিতা- হায়দার আলী (সংসদ সদস্য বদির ফুপাতো ভাই)। আবদুল হাকিম প্রকাশ ডাকাত আবদুল হাকিম (৪০), মিয়ানমারের নাগরিক।
মো. আবদুল্লাহ (৩১), ইউপি সদস্য, পিতা- আবুল বশর। জাফর আলম প্রকাশ টিটি জাফর (৩০), পিতা- মৃত মো. হোছন প্রকাশ।
আবদুর রহমান (৩২), পিতা- আলী আহম্মদ চেয়ারম্যান। জিয়াউর রহমান (২৮), পিতা- আলী আহম্মদ চেয়ারম্যান।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম চেয়ারম্যান (৪৩), পিতা- মৃত শফি মেম্বার।
রাশেদ মো. আলী (৩২), পিতা- অধ্যাপক মো. আলী (টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি কক্সবাজার-৪)।
মাহবুব মোরশেদ (৩৭), পিতা- অধ্যাপক মো. আলী (টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি কক্সবাজার-৪)। মুহাম্মদ শাহ মালু (৫০), পিতা- রুহুল আমিন। নির্মল ধর (৫৫), পিতা- ফকির চন্দ্র ধর।
মো. নুরুল কবির (৩৬), পিতা- মৃত, আবুল কাশেম। মারুফ বিন খলিল প্রকাশ বাবু (২৯), পিতা- মৃত ইব্রাহিম খলিল (গডফাদার আবদুস শুক্কুরের হিসাব রক্ষক)।
ইউছুপ জালাল বাহাদুর (৩০), পিতা- খলিলুর রহমান। সাইফুল ইসলাম (৪২), পিতা- কালা মিয়া (হাজি সাইফুল করিমের ভগ্নিপতি)। মো. ইউনুছ (৫০), পিতা- মৃত, আবদুল খালেক। আবদুল হামিদ (৩৫), পিতা- মৃত সিকদার আলী।
ছৈয়দ আহমদ ছৈয়তু (৫৪), পিতা- খায়রুল বশর। হেলাল আহমদ (৩৪), পিতা- মৃত হাজি কবির আহমেদ।
জামাল হোসেন (৫০), ইউপি সদস্য, পিতা- মৃত হায়দার আলী। মো. হাসান আবদুল্লাহ (৩৩), সভাপতি, হ্নীলা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ। মোস্তাক আহমদ প্রকাশ মুছু (৩৫), পিতা- মৃত, জাকির হোসেন।
রামু উপজেলার ইয়াবার পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদার শীর্ষে রয়েছে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুচ ভূট্টো (৪২), ইউনুচ ভূট্টোর ছোট ভাই নুরুল আজিম (২৬) সরাসরি ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
এছাড়াও রামু থেকে ইয়াবার গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এম এম নুরুচ ছাফা (৫৫), পিতা- মৃত অছিয়র রহমান। তিনি জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
ইয়াবা ছৈয়দ প্রকাশ বার্মাইয়া ছৈয়দ (৪৫)। রাশেদুল ইসলাম বাবুইন্যা (২৮), পিতা- নুরুল আলম।
বাবু প্রকাশ মলই বাবু (২৭), পিতা- নুরুল আলম। সালেক (২৬), পিতা- সাকের কোম্পানী।
রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানী (৫০)। জুলেখা আলম জুমু (২৬), পিতা- জাফর আলম।
মহেশখালী থেকে ইয়াবার গডফাদাররা হচ্ছেন শরীফ বাদশা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সহ-সভাপতি)। মৌলভী জহির উদ্দীন, পিতা- মৃত মোজাহের মিয়া।
মো. সালাহ উদ্দীন, (পৌরসভা বিএনপির বিগত কমিটির সহ-সভাপতি)। পিতা- মৌলভী জাকারিয়া।
পূর্ণ চন্দ্র দে (সাবেক পৌরসভা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক ছিলেন)।
চকরিয়া উপজেলায় ইয়াবার গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চকরিয়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সোহেল।
এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার এবং চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক রেজাউল করিম।
র্যাব ক্যাম্প কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানিয়েছেন, ইয়াবার গডফাদারদের দমন করা গেলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আর ইয়াবা ব্যবসা করার সাহস পাবে না। দেশ থেকে ইয়াবা নির্মূলে এর গডফাদারদের দমন করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে কোনো ধরনের পেশিশক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবার গডফাদার যতই শক্তিশালী হোক তাদের খুঁজে খুঁজে ধরা হবে।