সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা
প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪০ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৮
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিরা প্রচারণা চালাতে পারবেন, নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের অনেকেই সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, এতে নির্বাচনী প্রচারণায় আর সমতা থাকবে না। যা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করবে।
গত বৃহস্পতিবার ইসিতে এমপিদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পরে বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। সচিব বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। এজন্য নির্বাচনী বিধিমালা সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু সংসদ সদস্য পদ লাভজনক নয়, তাই তাদের নাম অতিগুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে পারবেন- এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে তারা সরকারি সার্কিট হাউজ ব্যবহার করতে পারবেন না। বিষয়টি এখন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এটি ছাড়াও বিদ্যমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণ বিধিমালায় ১১টি বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে বলেও ইসি সচিব জানান। ইসির এমন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা। এমনকি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ এ সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে নেয়নি। কেউ কেউ এ সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী বলেও উল্লেখ করেছেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে কমিশনের সভায় এ বিষয়টির অনুমোদন দেওয়ার সময় কমিশনার মাহবুব তালুকদার এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ জানান। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর জোট ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীমও এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সিটি ভোটে প্রচারের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে মত দেন। আলীম সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে কমিশনকেই উদ্যোগী হতে হবে। নতুন করে সংশোধনী এনে সংসদ সদস্যদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ দেওয়া হলে তাতে বৈষম্য বাড়বে। স্থানীয় প্রশাসন কখনই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপক্ষো করতে পারবে না। বিশেষ দল যেন সুবিধা না পায় সেটা দেখতে হবে। ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পেলে অন্য প্রার্থীরা সুযোগ বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, এমপিরা নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সুযোগ পেলে সমতার বিষয়টি আর থাকবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমপিদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সংবিধানের পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক এবং ফজলে কবিরের একটি রায় আছে সেই রায়েরও পরিপন্থী। তিনি বলেন, মোটকথা স্থানীয় নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণা চালানো সংবিধান এবং উচ্চ আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এক ধরনের উষ্মা প্রকাশ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, জানি নারে বাবা। নির্বাচন কমিশন কত সিদ্ধান্ত নেয়, সব সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তো বসে রইনি। তিনি বলেন, একটি অফিস নানা রকমের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। সব কিছু আমি জানি না। সব কিছু বুঝি না। নির্বাচন কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে, না নিলে কী হবে না হবে কার ভালো হবে কার মন্দ হবে সব কিছু আমি জানি না বুঝি না। সব কিছু আমার পক্ষে জানা সম্ভব না।