ইশতেহার দূরদর্শী : ড. আতিউর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘোষিত ইশতেহারকে একটি কম্প্রিহেনসিভ ও দূরদর্শী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, ইশতেহারে একই সঙ্গে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বড় বড় অবকাঠামোগুলো দ্রুত শেষ করার অঙ্গীকার আছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইশতেহার ঘোষণা-পরবর্তী এক পর্যালোচনায় খোলা কাগজের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইশতেহার উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আতিউর রহমান বলেন, এক ধরনের রীতি হয়ে গেছে অনেক কাজ শুরু করি কিন্তু শেষ করা হয় না। এ কারণে অনেক কর্মসংস্থান ব্যাহত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহারে বলেছেন, আমরা বড় বড় প্রকল্পগুলো শুরু করেছি, এগুলো আমরা শেষ করব।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ হলো কৃষি। কৃষিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য চলমান যান্ত্রিককরণ কার্যক্রমকে চালিয়ে নেওয়া হবে। দীর্ঘমেয়াদি, স্বল্প মেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি কর্মসূচিগুলো সমন্বয় করে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনাকে অ্যাঙ্কর হিসেবে বাস্তবায়ন করা হবে। ভবিষ্যতের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনার সমন্বয় করতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক সামনে রাখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। ব-এটা পরিকল্পনা একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মসূচি। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য ইশতেহারে দিকনির্দেশনা আছে বলে মনে করেন আতিউর রহমান।
শেখ হাসিনা উদ্ধৃত করে সাবেক এ গভর্নর বলেন, ইশতেহারে বিদ্যুতের ব্যাপারে বলা হয়েছে প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। এখানে কারিগরি শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট তৈরি করার কথা। এর মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। তরুণদের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া খুব ভালো লেগেছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, তাদের উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যদিকে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও যাতে তাদের কর্মসংস্থান হবে। প্রত্যেক উপজেলাতে এক হাজার করে প্রশিক্ষিত তরুণদের বিদেশে পাঠানো যায়। এসব কারণে এ ইশতেহার হয়ে উঠেছে ভারসাম্যপূর্ণ জনকল্যাণমুখী ইশতেহার।
সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘোষিত ইশতেহারে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের দাম নিশ্চিত করার ব্যাপারে নির্দেশনা আছে। এটা খুবই বাস্তবমুখী। আমাদের কৃষি আগের চেয়ে অনেক বেশি বহুমুখী। কৃষি বলতে এখন শুধু চাল উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ফুল, মাছ, গবাদিপশু থেকে শুরু করে অনেক কিছু কৃষির অন্তর্ভুক্ত। ফলে এগুলোর মার্কেটিংয়ের দরকার। ভ্যালুচেইন মার্কেটিংয়ের দরকার। এগুলো মার্কেটিং করার জন্য চেইন দরকার। ইশতেহারে এগুলো বলা হয়েছে বলে মনে করেন ড. আতিউর।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভিলেজ সুপার মার্কেট তৈরি হয়েছে। খুলনা, যশোরে এ ধরনের মার্কেট তৈরি হয়েছে। অঞ্চলে অঞ্চলে এগুলো তৈরি হয়েছে। পণ্যের উৎপাদন ও ক্রেতানির্ভর মার্কেট গড়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। আগামী দিনের কৃষি বাজার যদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে ভ্যালুচেইন নির্ভর বাজার গড়ে উঠবে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সে কথাই বলেছে। আশপাশের ভারতীয় পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো আমাদের কৃষি বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে। এখানে বেশ কিছু কোম্পানি কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে ইতোমধ্যে এসব রাজ্যে রপ্তানি শুরু করেছে। এর পরিধি আরও বাড়তে পারে।
ইশতেহারে শেখ হাসিনা কৃষিভিত্তিক মাঝামাঝি ও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলার কথা বলেছেন। এ জন্য সহজ শর্তে ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইশতেহারে মার্কেটিংয়ের কথা বলা হয়েছে; নারীর ক্ষমতায়নের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছ। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয় এ ইশতেহারে।
সামাজিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। যারা সক্ষম তারাই এগিয়ে যাবে আর সুবিধাবঞ্চিত মানুষ পিছিয়ে পড়বে তা হতে পারে না। আওয়ামী লীগ একনাগাড়ে ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে সে কাজটি করেছে। ইশতেহারে প্রতিবন্ধী, জাতিগত নৃ-গোষ্ঠী বৃদ্ধসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে। হাওর-বাঁওড় ও চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের ব্যাপারে কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে ঘোষিত ইশতেহার সব শ্রেণির মানুষকে স্পর্শ করেছে বলে মনে হয়। এ বিবেচনায় এটি একটি কম্প্রিহেনসিভ ইশতেহার বলে তিনি বরেন।
আতিউর বলেন, ইশতেহারের মাধ্যমে শেখ হাসিনা পরিষ্কার করেছেন আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো আপস করবে না। ডিজিটাল টেকনোলজির কারণে ইতোমধ্যে স্বচ্ছতা এসেছে, প্রশাসনকে জনবান্ধব করা হবে। দুর্নীতির ব্যাপারে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি সাড়া আছে। শেখ হাসিনা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন তখন উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। নির্বাচিত হয়ে এসে সরকার দুর্নীতিবিরোধী কোনো অভিযান চালালে মানুষ তাকে সমর্থন দেবে।
শেখ হাসিনার সরকার গ্রামের মানুষের কাছে শহরের সুবিধা পৌঁছে দিতে চান। তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন, কানেকটিভিটি বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্রামের মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে নাগরিক সুবিধা বেড়েছে। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, প্রযুক্তির ব্যবহারের বৃদ্ধি, প্রশিক্ষিত জনশক্তি বিদেশে পাঠানো ও দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা মানুষের আয় বৃদ্ধির ধারাকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামে বসেই মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে। আমি মনে করি, শহরের জঞ্জালকে দূরে রেখে গ্রামকে গ্রাম রেখে শহরের সুবিধা নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনার যে প্রতিশ্রতি তা খুবই অর্থবহ।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ কৌশলী ও মানবিক নীতির কথা বলেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মানবিক কথা বলেছেন। অর্র্থনীতিতেও তিনি সবসময় অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের কথা বলেছেন। চলমান উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনা একথা বলেছেন। অঙ্ক কষে কষে তিনি একথা বলেছেন।
সম্প্রতি জঙ্গিবাদ খুব আলোচিত বিষয়। বিশ্বজুড়ে যখন জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে গলদঘর্ম হয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার খুব কঠিন হাতে জঙ্গিবাদকে নির্মূল করেছে। আগামী নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারলে জঙ্গিবাদদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করেছে। আবার বাংলাদেশে অবস্থান করে বিদেশেও যাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম না চালাতে পারে সে ব্যাপারে ইশতেহারে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে। এটা খুবই যৌক্তিক ও সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেন আতিউর রহমান।