ফরিদপুরে নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা
এবারের লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পাঁচবার ‘শীর্ষ দুর্নীতির দেশ’ হয়েছিল বাংলাদেশ। দুর্নীতির সেই লাগাম আমরা টেনে ধরেছি। আগামী দিনে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়াই আমার লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ফরিদপুরের কোমরপুরে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশনে এক জনসভায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। দুর্নীতির পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত পরশু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল তিনি ভাঙ্গা, কমরপুর, রাজবাড়ী মোড়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ধামরাইয়ে রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনসভা ও পথসভায় বক্তব্য দেন।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘উন্নয়নের মার্কা নৌকা। তাই ধারাবাহিক উন্নয়ন চাইলে আবারও নৌকায় ভোট দিতে হবে। আমি আপনাদের কাছে নৌকার ভোট চাইতে এসেছি। নৌকার জয় না হলে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নয়নের গতি থেমে যাবে। আপনাদের একটি ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ফের ক্ষমতায় এলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা আপনাদের অনেক প্রলোভন দেবে। এতে পা দেওয়া যাবে না। আপনারা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিকে ভোট দেবেন। আমি জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। আমার কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, আর পেছনে যেতে চাই না। এ যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।’
ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের কোমরপুরে এক পথসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে ফরিদপুরকে বিভাগ করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, আর পেছনে যেতে চাই না। এ যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।’ তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্তরা যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে। তারা আসলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস করে। তারা আসলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বন্ধ করে দেবে।’ দুর্নীতি মামলায় দ-িত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতিমের সম্পদ কেড়ে নিলে কোরআন শরিফেও লেখা আছে তাকে শাস্তি পেতে হবে। আর সেই বিএনপি নেত্রী এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে আজকে কারাগারে।’
ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকায় নির্বাচনী পথসভায় জনগণের কাছ থেকে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা আমাকে ওয়াদা দেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’ তখন উপস্থিত জনতা ওয়াদা দেন।’ প্রধানমন্ত্রীও তখন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের ওয়াদা নিলাম। আপনাদেরও ওয়াদা দিয়ে যাচ্ছি, প্রয়োজনে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় বেলা ১টা ৪০ মিনিটে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চান। এ সময় তিনি রাজবাড়ীতে কাজী কেরামত ও জিল্লুল হাকিমকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জানে কীভাবে দেশের উন্নয়ন করতে হয়। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, মাদকমুক্ত জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। মা-বোনদের কাছে ভোট চাই। আবারও যদি আপনাদের ভোটে ক্ষমতায় আসতে পারি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেব। আমি জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। আমার কোনো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে। আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই-যুদ্ধাপরাধী, খুনি, অগ্নিসন্ত্রাসীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য নৌকায় ভোট দিন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরও একবার আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন।’
মানিকগঞ্জের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থেকেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আমরা সম্মান পেয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতায় থেকেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করব।’ গতকাল বিকালে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট এবং মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বিগত ১০ বছরে তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সময়ে দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা তৈরি করেছে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাস। তাদের সময়ে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দেশ। আর আওয়ামী লীগের সময়ে দেশে শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। দেশের মানুষ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আবার ক্ষমতায় এলে মানিকগঞ্জে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক জোন ও আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৯টায় টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের কথা জানান শেখ হাসিনা। বিকালে কোটালীপাড়া উপজেলা সদরে শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে নিজের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানান ভোটারদের কাছে। যাত্রাপথে বাজার ও সড়কে অসংখ্য মানুষ নৌকা মার্কার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।