তৃতীয় শক্তির ষড়যন্ত্র খতিয়ে দেখুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। ভোটের ভাগ্য যাতে মাস্তান-সন্ত্রাসীদের হাতে চলে না যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সব জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), সব জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিইসি বলেন, ‘পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন। সেটি হলো ২০১৪ সালের নির্বাচন। সেই নির্বাচনের অবস্থা ভুলে গেলে চলবে না। তখন ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার আলোকে এবারের নির্বাচন প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ছিল। তবুও আমরা কী দেখেছিলাম। পুলিশ সদস্য, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সেটার কী পরিপ্রেক্ষিত ছিল, আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি; সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না।’
সিইসি বলেন, ‘সে রকম কোনো পাঁয়তারা যাতে না হয়। আবার যাতে সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব জনগণের জীবন রক্ষা করা, মালামাল রক্ষা করা, সম্পদ রক্ষা ও দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। আমি আশা করব, আপনাদের নিরপেক্ষ ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও মানসিকতা দিয়ে এবারের নির্বাচনে আমরা এসব মোকাবেলা করতে পারব। এ বছর যেন আর সে রকম তা-ব না ঘটে। সে রকম পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। এখন থেকে সেটা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে।’
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘যেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো, তার পরের দিনই দুর্ঘটনা। সে ঘটনাগুলো যত ছোটই হোক না কেন, দুটো জীবন চলে গেল। সে দুটো জীবনের মূল্য অনেক। কিন্তু কেন হলো? তারপর এখানে-ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করা। এগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক, সামাজিক কারণ? নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে? এগুলো ভালোভাবে নজরে নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে।’
কোনো ঘটনা ঘটে গেলে একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি হালকাভাবে নিলে হবে না। রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করব।’
২৪ ডিসেম্বর সেনা মোতায়েন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে সেনা। গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় খোলা কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। প্রতি জেলায় ছোট আকারে সেনাবাহিনীর একটা টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশ, র্যাব ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভোটের মাঠে বিজিবি কবে থেকে নামবে এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, বিজিবির মাঠে নামা নিয়ে আমরা প্রস্তাব রেখেছি আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে। তবে কমিশনের কেউ কেউ বলছেন ২০ ডিসেম্বর, কেউ আবার বলেছেন ১৫ ডিসেম্বর থেকে। আসলে বিজিবি কবে থেকে মাঠে নামবে তা আগামী শনিবার ঠিক করবে কমিশন।
আজকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে কয়েকজন সুপারিশ করেছেন মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আপনাদের ভাবনা কী? এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এখানে আসলে নিয়ন্ত্রণ বলা যাবে না। তারা যেটা বলেছেন কার্ড ছাড়া যেন কোনো সাংবাদিক ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ না করে। কারণ হচ্ছে অনেক অনলাইন পত্রিকা আছে যারা ভুয়া। তারা যেন কেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ না পায়। সেই বিষয়ে তারা মত দিয়েছেন। কারণ তারা (ভুয়া সাংবাদিক) যে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপার ছিনতাই করবে না, এমনটা তো বলা যাবে না।
ভোটের আগে পরে ইন্টারনেটের গতি ৪-জি থেকে ২-জিতে নামিয়ে আনার ব্যাপারে পুলিশ ইসির প্রতি সুপারিশ করেছেন এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, তারা এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছেন তবে আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি ইসি। আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনাও নেই আপাতত।