ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কঠিন কিডনি চিকিৎসা

সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮

সারা বিশ্বে কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এসব রোগীর মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কিডনি বিকল হচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ৬ লাখ নারী অকাল মৃত্যুবরণ করেন কিডনি বিকল হয়ে। এ বাস্তবতায় দেশে বিশেষজ্ঞ কিডনি চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। প্রতি ১২ লাখ রোগীর জন্য রয়েছে ১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিন দিন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্যে বিষক্রিয়াই যার অন্যতম একটি কারণ। কিডনিজনিত রোগের কিছু কিছু ওষুধের মূল্য আকাশচুম্বী, চিকিৎসা ব্যয় জনগণের নাগালের বাইরে থাকায় দেশে শতকরা ১০ জন রোগী এ চিকিৎসা চালাতে পারে। ফলে বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ৯০ শতাংশ মানুষ।

এ ছাড়া যে হারে এ রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে বাড়ছে না প্রয়োজনীয় ডায়ালাইসিস সেন্টার। তারা জানান, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস আছে তাদের কিডনি রোগের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। ঘন ঘন কিডনিতে ইনফেকশন, ধূমপান, প্রস্রাব প্রবাহে বাধা, স্থূলতা, পাথরজনিত রোগ, তীব্র বেদনানাশক ওষুধ সেবন, অলস জীবনযাপন ও অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক এ রোগের অন্যতম কারণ। তবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মাধ্যমে এ রোগে মৃত্যুঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই এই ঘাতকব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা ও স্বাস্থ্যসম্মত লাইফ স্টাইল মেনে চলা।

কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন-অর রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার খোলা কাগজকে বলেন, অনেক ডাক্তার রোগীকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই প্রথমে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন। জ্বর হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেন। এতে জ্বর ভালো হলেও রোগীর কিডনি যে বিকল হয়ে যায় সেটা বোঝে না। কিডনি রোগকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে হারুন-অর রশীদ বলেন, ব্যথা হলে প্যারাসিটামল ওষুধ খেতে হবে। আর কোনো ব্যথানাশক ওষুধ নিরাপদ নয়। খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

অধ্যাপক ডা. হারুন-অর রশিদ আরও বলেন, তিনটি কারণে মূলত কিডনি সমস্যা হচ্ছে- এক. ডায়াবেটিস, দুই. উচ্চ রক্তচাপ এবং তিন. নেফ্রাটাইস রোগ। সারা দেশে অবস্থিতি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় যারা কর্মরত আছেন তাদের যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়া যায় তাহলে কিডনি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসবে। দেশে ব্যাপকসংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুবই কম। ডায়ালাইসিস সেন্টার বাড়ানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ৭০ শতাংশই রয়েছেন রাজধানীতে। আর বাকি ৩০ ভাগ রয়েছে সারা দেশে। দেশের সব জায়গায় এ চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের যে খরচ হয় তা, বহন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। কিডনি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রথম দিকে এর কোনো উপসর্গ থাকে না। কিন্তু যখন উপসর্গ ধরা পড়ে ততক্ষণে কিডনির প্রায় ৭৫ ভাগই বিকল হয়ে পড়ে। কিডনি বিকল হলে তখন সেই রোগীর চিকিৎসা খরচ খুবই বেড়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করলে তা অনেকাংশেই নিরাময় করা সম্ভব।

 
Electronic Paper