ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রচারে উত্তাপ শঙ্কা

সুলতান মাহমুদ
🕐 ১০:৪৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর। ওইদিন প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের প্রতীক পেয়ে ওইদিন থেকেই প্রার্থীদের অনেকে প্রচারণায় ঝাপিয়ে পড়েন। প্রচারণার তৃতীয় দিনে গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এবং ঢাকার দোহারে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন।

এর আগের দিন গত মঙ্গলবার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বেশ উত্তপ্ত। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে নোয়াখালীতে এক যুবলীগ নেতা এবং ফরিদপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। নোয়াখালীতে ব্যারিস্টার মওদুদের সমাবেশ হামলায় পণ্ড হয়ে যায়। এ ছাড়া একই দিন বগুড়া, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে।
যদিও নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের নেতাকর্মীরা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। কেননা তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা-হামলার ভয় অনেকটা কম। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা আতঙ্ক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুরনো মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গতকালও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরনো একটি নাশকতার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া নির্বাচনী গণসংযোগের সময় ঢাকা-১ আসনের (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাককে গতকাল পুলিশ আটক করেছে। যদি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েক দিন আগে বলা হয়েছিল কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে ইসির অনুমতি লাগবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির এ কথা অতটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন ধরনের কয়েক হাজার মামলা হয়েছে। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২৬৭টি মামলারও রেকর্ড রয়েছে। বিএনপির অসংখ্য নেতা রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে শতাধিক পরিমাণ মামলা রয়েছে। বিএনপির কয়েক লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের মামলা রয়েছে। এসব মামলায় যে কোনো সময় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হতে পারেন। এমন শঙ্কা মাথায় নিয়েও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বিএনপি জোটের নেতাকর্মীরা। বিরোধী জোটের নেতারা বলছেন, সরকার চাইছে বিএনপি ও তার জোট শরিকরা নির্বাচনে না আসুক। এ জন্যই নানা হামলা মামলা করছে। তবে যতই হামলা মামলা করুক না কেন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে বিরোধী এ জোট।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, সরকারি দল উৎসবের আমেজে প্রচার প্রচারণা চালালেও আমরা পারছি না। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন উৎসব আছে তেমনিভাবে নানা শঙ্কাও রয়েছে। বেশিরভাগ নেতাকর্মীর নামেই অসংখ্য মামলা রয়েছে। উৎসব আছে নেতাকর্মীদের মাঝে তবে গ্রেপ্তারের শঙ্কা উৎসবকে কেড়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের পর গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র নির্বাচনী ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। পোস্টার টানিয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি জানান দিতে ব্যস্ত প্রার্থীরা। রাস্তার অলি-গলিতে টানানো পোস্টারগুলোই জানান দিচ্ছে দেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। নির্বাচনী আমেজ কয়েকগুণ বাড়িয়েছে পোস্টারগুলো। এগুলোর মাধ্যমে ভোটের লড়াইয়ের নিজেদের অস্তিত্বও জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনী উৎসবে রাজশাহী শহরের সাগরপাড়া, সাহেব বাজার, আলুপট্টি, কুমারপাড়াসহ সব এলাকার রাস্তায় শোভা পাচ্ছে প্রধান দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোস্টার। নির্বাচন পর্যন্ত এমন উৎসবমুখর পরিবেশ দেখতে চান জেলার ৬টি আসনের ১৯ লাখ ভোটার। এ জেলায় ভোটের মাঠে লড়ছেন বিভিন্ন দলের ২৫ জন প্রার্থী।
খুলনায় নির্বাচনী প্রচারণা জমিয়ে তুলতে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানোয় প্রেসগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে ছাপানো হচ্ছে নির্বাচনী পোস্টার। তাই নির্বাচনী আমেজ বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো লাভের আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সারা দেশের মতো নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে সিলেটেও। জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, বন্দরবাজার, আম্বরখানাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে ব্যানার-পোস্টারে। ভোট উৎসবে মাততে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার প্রত্যাশা এ জেলার সাড়ে ২২ লাখ ভোটারের। এখানে ৬টি আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪০ জন প্রার্থী।
এ ছাড়া রংপুর, দিনাজপুর, ভোলা, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরাসহ দেশের সর্বত্র রাস্তার মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩শ আসনে ১ হাজার ৮৪১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দেশে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল নিজ দলের কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, এখন আর ভাষণ দিয়ে লাভ নেই, অ্যাকশনে যেতে হবে। অনেক কাজ, অনেক ক্যাম্পেইন করতে হবে। ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারের সময় গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দুই নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি। এর প্রমাণ আছে। তিনি বলেন, সহিংসতা কারা করছে? দুজন কালকে (গত মঙ্গলবার) মারা গেছে, একজন নোয়াখালীতে, আরেকজন ফরিদপুরে।
আর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করতে পারে। তাই সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে প্রত্যেক কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। এ ব্যাপারে জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। ফখরুল আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ধানের শীষে ভোট দিন।

 
Electronic Paper