কোটিপতি কেরানি
নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের জাদু
এম কবীর
🕐 ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন টাইপিস্ট হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে কমন সার্ভিসের হেড অ্যাসিসটেন্স পদে কর্মরত। এ পদে যোগদানের পরই খুলে যায় তার ভাগ্য। রাতারাতি গাড়ি, বাড়ি ও কোটি টাকার মালিক বনে যান। তার নাম খাঁন সিরাজুল ইসলাম। সবাই তাকে খাঁন সাহেব বলে ডাকেন।
কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি এ সম্পত্তি অর্জন করেন। কি করে এত নিম্নপদের একজন সরকারি কর্মচারী এত দ্রুত কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন সবার কাছে এখন সেই প্রশ্ন। বিএসইসিতে তার অনেক দাপট। অফিসের বড় কর্মকর্তাদের দামি দামি গাড়ি ব্যবহার করছেন তিনি। এই বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দুটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও দুদকে তার ফাইল অজ্ঞাত কারণে চাপা পড়ে আছে। শিল্প মন্ত্রণালয়েও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের চিঠি গেছে।
দুদক ও মন্ত্রণালয়ের চিঠি থেকে জানা যায়, খাঁন সিরাজুল ইসলাম ওরফে খাঁন সাহেব ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্র্র্রকৌশল করপোরেশনে (বিএসইসি) টাইপিস্ট পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কমন সার্ভিসের হেড অ্যাসিসটেন্স হিসেবে সেখানে আছেন এবং বিএসইসি কর্মচারী সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই। বিএসইসির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, কেনাকাটায় পার্সেন্টেজ, গাড়ি মেরামত ও জ্বালানি ক্রয়ের একটি অংশ তার পকেটে যাচ্ছে। এছাড়া নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের টাকার একটি অংশও যাচ্ছে তার পকেটে- এমন অভিযোগ রয়েছে।
কয়েক বছরেই নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্য করে তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন। এই চাকরি করেই রাজধানীতে কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও তৈরি করছেন আলিশান বাড়ি। এমনকি কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টে কয়েক কোটি টাকা জমা রয়েছে। এমন তথ্যও দুদকের কাছে দেওয়া হয়েছে।
দুদকের কাছে দেওয়া ওই চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মিরপুর ১০ নাম্বারে তিনি একটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট ক্রয় করে বসবাস করছেন (বাসা নং : ০৭, তৃতীয়তলা, রোড নং : ১০, ব্লক সি,) সিরাজুল ইসলাম। তাছাড়া প্রাপ্যতার বাইরে খাঁন সাহেব ঢাকা মেট্রো খ-১২-০৭৫৭ (নিশান) গাড়িটি ব্যবহার করছেন। বিএসইসির এ গাড়িটি পরিচালক (বাণিজ্যিক) ব্যবহার করার কথা, কিন্তু কাগজে-কলমে পরিবহন পুলে থাকলেও বাস্তবে তা ব্যবহার করছেন সিরাজুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে খাঁন সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে দুদকে অভিযোগ রয়েছে সেই ব্যাপারে কিছুই জানা নেই। তবে যে বা যারাই এই অভিযোগ করে থাকুক সেটার সত্যতা নেই।’ প্রতিহিংসাবশত তার নামে কেউ অভিযোগ করে থাকতে পারে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে চাকরি জীবনে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িত নন বলে খোলা কাগজকে এমনটিই জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের জন্য তাকে একাধিকবার তার সেলফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে এসএমএস পাঠালে তারও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।