ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নৌকায় ভোট দিয়ে জবাব দিন

গোপালগঞ্জে নির্বাচনী সভায় শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৫:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮

রোদ-কুয়াশার লুকোচুরির শীতের সকাল। সাড়ে ৮টার দিকে গণভবন থেকে বেরিয়ে এলো গাড়িবহর, সেখানে সিলভার রঙের একটি মার্সিডিজ গাড়ি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত এ গাড়ি করেই শুরু করলেন আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারাভিযান। সিলভার রঙের গাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুঃসহ এক স্মৃতি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গাড়িটি। ওই গাড়িতে চেপেই সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গেলেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করলেন শেখ হাসিনা।

সড়কপথে শেখ হাসিনার গাড়িবহর বেলা ২টার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে। জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তিনি সেখানে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।
ব্যক্তিগত ও দলীয় গাড়ি নিয়ে শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যান। এ সফরে শেখ হাসিনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর ভাইয়ের ছেলে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল, শেখ ফজলুল করিম সেলিম উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং  চিত্রনায়ক রিয়াজ ও ফেরদৌস রয়েছেন তার সফরসঙ্গী হিসেবে।

নিজের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা মিলিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসন থেকে তিনি সংসদে গেছেন ছয়বার। গতকাল বিকালে তিনি কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা ওই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধে যাদের সাজা হয়েছে তাদের দোসরকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী, স্বাধীনতার শত্রু, গণহত্যা পরিচালনাকারী, অগ্নিসংযোগকারী, খুনি-সন্ত্রাসীদের নিয়ে যারা আজকে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে হবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমার প্রথম নির্বাচনী সভা। এই সভার মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে আবেদন জানাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। জনগণের সেবা করতে চাই। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্ন আমি পূরণ করতে চাই। নৌকা মার্কায় যাকে যেখানে প্রার্থী করেছি, তাদের ভোট দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। নৌকায় ভোট দিয়ে কেউ কখনো বঞ্চিত হয় না। নৌকায় ভোট দিয়ে সবাই সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।’

বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশে আর গরিব থাকবে না। প্রতিটি গ্রাম হবে শহরের মতো।’ তিন মেয়াদে ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করতে পেরেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটালীপাড়ার মাধ্যমে আমি সমগ্র দেশবাসীকে এই আহ্বান জানাব, আমরা ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। সেই সময় যেন ওই যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী খুনি রাজাকার এবং যারা অগ্নিসন্ত্রাসকারী তারা যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাহলে তারা দেশকে ধ্বংস করে দিবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে দেবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সমগ্র বাংলাদেশের কাছে সেই আবেদন জানাই, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। বাংলাদেশ আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্বাচনী সফর নিয়ে কোটালীপাড়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। জনসভাস্থল ছেড়েও আশপাশের রাস্তায় মানুষের ভিড় জমে যায়।

কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুভাষ চন্দ্র জয়ধরের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।

জনসভা শেষে টুঙ্গিপাড়া ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে সেখানে থাকবেন তিনি। এর আগে সকালে গণভবন থেকে রওনা হয়ে শেখ হাসিনার গাড়িবহর মাওয়া হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে।

যাত্রাপথের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার দেখা পেতে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের হাতে ছিল নৌকা মার্কার সমর্থনে বিভিন্ন স্লোগান গান লেখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন। শেখ হাসিনা এবং নৌকার পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। শেখ হাসিনা এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।

টুঙ্গিপাড়ায় প্রচার শেষে বৃহস্পতিবার সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। ফেরার পথে প্রায় ১০টি পথসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। ভাঙ্গার মোড়, ফরিদপুরের মোড়, রাজবাড়ী রাস্তার মোড় (রাজবাড়ী জেলা), আরোয়া ইউনিয়ন, পাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ পৌরসভা, রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ (ধামরাই) ও সাভারের জালেশ্বর মৌজার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এসব পথসভা অনুষ্ঠিত হবে।

 
Electronic Paper