ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পুনরাবৃত্তি না নতুন

সিলেট-১ ও শেরপুর-৩ আসনে যে দলের প্রার্থী জিতেন তারাই সরকার গঠন করেন

কুন্তল দে
🕐 ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮

প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। হিমেল সেই হাওয়াকে থামিয়ে দিয়ে চারপাশে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা নেমে গেছেন প্রচারণায়। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তারা যাচ্ছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। কোথাও কোথাও উত্তপ্ত হচ্ছে নির্বাচনী পরিবেশ। সংঘর্ষে আহতও হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আর বিধি ভঙ্গের নালিশ জমা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে। শেষপর্যন্ত কে জিতবে, কে ক্ষমতায় আসবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।

সাধারণ মানুষের ভেতরও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আগের নির্বাচনগুলোর দৃষ্টান্ত টেনে তারা মেলাতে চাইছেন সমীকরণ। নির্বাচন নিয়ে চালু থাকা জনশ্রুতিও তারা নিয়ে আসছেন সামনে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সিলেট-১ এবং শেরপুর-৩ আসন দুটিতে যে দল জয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কি চালু থাকা ‘জনশ্রুতি’ সত্য হবে, নাকি সৃষ্টি হবে নতুন আরেক ইতিহাস এ প্রশ্ন এখন মুখে মুখে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিলেট-১ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি আসন। সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড, সিলেট সদর ও কোম্পানীগঞ্জের একাংশ নিয়ে এ আসনের সীমানা। হযরত শাহজালাল (র.), হযরত শাহপরাণের (র.) মাজার এখানে অবস্থিত। বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন এ দুজন আউলিয়া। রেওয়াজ অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলো শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। এ বছরের ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরে গিয়ে হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরাণের মাজার জিয়ারত করেন। ওই সফরের মাধ্যমেই দেশের বিভন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলায় তার প্রাক-নির্বাচনী সফর শুরু হয়। সিলেটে গিয়ে তিনি জনসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ থেকে তার নির্বাচনী সফর শুরু করছেন নিজের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ থেকে। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি জিয়ারতের মাধ্যমে তার এ সফর শুরু হচ্ছে আজ। আগামীকাল বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে তিনি ঢাকায় ফিরবেন। এরপর সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের কথা রয়েছে তার।
এদিকে আজ সিলেট সফরের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হচ্ছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। আগের নির্বাচনগুলোতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শুরু হতো বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা।
এবারের নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নানা দিক বিবেচনা করেছে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট। এ আসনে এবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে আব্দুল মোমেনকে। আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি। অন্যদিকে এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুক্তাদির চৌধুরী। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
 বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত দশটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেসব নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন, সে দলই সরকার গঠন করেছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদে এটি ২২৯নং আসন হিসাবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। ওই নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল হেকিম চৌধুরী। ওই নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংস খুনের পর দেশ দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসনে চলে যায়। দীর্ঘ এ ১৫ বছরে তিনটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৯, ১৯৮৬ ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে বিএনপির সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (দুবার) নির্বাচিত হন। সিলেট-১ আসনে জয়ীরাই সরকার গঠন করে।
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদের পতন হলে দেশ আবার সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে বিএনপির হয়ে খন্দকার আব্দুল মালিক শুধু সিলেট-১ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেবার বিএনপিই সরকার গঠন করে।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। সেবার আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে ওই আসনটি পুনরুদ্ধার করেন বিএনপির প্রার্থী সাইফুর রহমান। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলের জোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নবম জাতীয় সংসদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট।
সিলেট-১ আসনের মতো  শেরপুর-৩ আসন নিয়েও জনশ্রুতি চালু রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে এ আসনটিতে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন সে দলই সরকার গঠন করেছে। পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে পর্যায়ক্রমে জেতেন বিএনপির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ বারী, বিএনপির প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেল ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক। শেরপুর-৩ আসনে জয়ী দলই সরকার গঠন করে।
সিলেট-১ ও শেরপুর-৩ আসন নিয়ে জনশ্রুতি থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মিলের বিষয়টা নিছক কাকতাল। তবুও এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে জল্পনা-কল্পনা চলছে। এখন দেখার বিষয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি সত্যিই ঘটবে না নতুন ইতিহাস তৈরি হবে।    

 
Electronic Paper