ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোজার বাজার

সবার ওপরে সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০১৮

রমজান এলেই প্রতিবছর দেশের বাজার হয়ে ওঠে অস্থির। এ মাসটিতে নির্দিষ্ট কিছু দ্রব্যের ব্যবহার বেড়ে যায়। রমজানকে সামনে রেখে এসব পণ্য আগে থেকেই আমদানি করা হয়। এ বছরও পিয়াজ, ছোলা, ডাল, খেজুরসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয়েছিল।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও রোজা শুরুর আগে বাড়তে থাকে এসব পণ্যের দাম। নিত্য এসব পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শসা, বেগুন, গাজরসহ বিভিন্ন সবজির দামও। বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও।
সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও এসব পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বেগুন-শসার মতো সবজির ক্ষেত্রেও এসব সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। রোজা শুরুর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকেও বসেছেন। বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাম বাড়ালে সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালতও। কিন্তু সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই দাম বাড়িয়েছেন এসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বাধ্য হয়েই মানুষকে অনেক বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে এসব পণ্য। মাঝখান থেকে কোটি কোটি টাকার মুনাফা করে নিচ্ছে সিন্ডিকেট।
মাংস, ভোজ্যতেল, চিনি, পিয়াজ-রসুনে প্রাচুর্য
রোজায় সবজির বাজার, মাংসের বাজার, ভোজ্যতেল, চিনি ও পিয়াজ-রসুনের বাজারে সরবরাহ বিপুল। তবু দাম বেড়েছে এসব নিত্যপণ্যের। রোজার শুরুতেই রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) রোজা উপলক্ষে গরুর মাংসের দর প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা বিক্রেতারা মাংস বিক্রি করছেন ৫০০ টাকা দরে, যা কয়েক দিন আগের তুলনায় ২০ টাকা বেশি। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে।
সবজি পড়ে আছে আড়তে, খুচরায় দর দ্বিগুণ
বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাট থেকে কিনে আনতে যে ব্যয় হয়েছে, কারওয়ান বাজারের আড়তে দাম তার চেয়ে কম। এ কারণে রমজান মাসের বিপুল চাহিদার বাজারেও বেগুন, শসা, কাঁচামরিচ ও লেবু বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন ফড়িয়ারা। পাইকারি বাজারের এই বিপুল সরবরাহের কোনো সুফল নেই খুচরা বাজারে। সেখানে রোজার বাড়তি চাহিদার সুযোগে ও রোজার বাজারের অজুহাত দেখিয়ে দ্বিগুণ দাম আদায় করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, বেড়েছে দেশে
রোজায় দেশে যেসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা থাকে, সেগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারদর কমেছে। কিন্তু দেশের মানুষ এর সুফল পায়নি; বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম উল্টো বেড়েছে।
ভারতের বাজারে গত মাসের মাঝামাঝি পিয়াজের দর মৌসুমের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। তখন প্রতি কেজির দর ছিল মাত্র ৬ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ টাকার কম। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে পিয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। দেশে ১৮-২০ লাখ টন উৎপাদিত হয়। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে দেশে ৬ লাখ ৮৬ হাজার টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে।
পিয়াজের মতো রসুনেরও এখন ভরা মৌসুম। অন্যদিকে চীনের বাজারে রসুনের দর কমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে এক টন রসুনের দর ৭১৮ মার্কিন ডলার, যা এক মাস আগের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম।
ভোজ্যতেল ও লবণে দোকানদারদের পোয়াবারো
বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৭১ ডলার, যা এপ্রিল মাসে ৮৩০ ডলারে নেমেছে। পড়তির বাজারে দেশে নিজেদের বিক্রি বাড়াতে কোম্পানিগুলো খুচরা বিক্রেতাদের বাড়তি ছাড় দিচ্ছে। দুটি শীর্ষ কোম্পানির পরিবেশক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি ২০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনলে সঙ্গে ২ লিটার বিনা মূল্যে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
ছোলার নানা চিত্র
বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, আমদানি পর্যায়ে এ বছর প্রতি কেজি মাঝারি মানের ছোলা ৪৭ থেকে ৫১ টাকা ও ভালো মানের ছোলা সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
ঢাকার ৯টি বাজারের তথ্য সংগ্রহ করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানায়, ছোলার কেজি এখন ৭০-৮০ টাকা। কারওয়ান বাজারে সব দোকান ভালোমানের ছোলা ৮০ টাকা কেজি চাইছেন বিক্রেতার।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত এক মাসে ছোলার দাম ১১ শতাংশ কমে টনপ্রতি ৫৬৭ ডলারে নেমেছে।

 
Electronic Paper