দুই জোটেই চিন্তার ভাঁজ
অস্বস্তি মহাজোটে * ঐক্য-২০ দুরূহ সমীকরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন ছিল গতকাল। এবারের নির্বাচনে দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কেন্দ্র করে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। একপক্ষে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামী বেশ কয়েকটি দল নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট মহাজোট। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল এ দুটি জোট নিয়ে নির্বাচনের মাঠে বিএনপি। তবে শরিক ও মিত্রদের মাঝে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই জোটেই চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মাঝে বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়নের আশায় কয়েকজন নেতা দল পরিবর্তনও করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনে না আসার ঘোষণাও দিয়েছেন কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল তিনশ সংসদীয় আসনের মধ্যে সারা দেশে ২৩১টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
এর বাইরে ১৪ দলের মধ্যে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তিনটি আসনে, জাসদের অন্য অংশ দুটি আসনে, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি আসনে, তরিকতে ফেডারেশন ২টি ও জেপি মঞ্জু ১টি আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক শরিক দলগুলোর মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও দলগুলো ঐক্যের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। তবে মহাজোটের অন্যান্য মিত্র জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের মধ্যে আসন ভাগাভাগিতে এখনো মীমাংসা করে উঠতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও বি. চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসেও এ বিষয়ে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ তাদের শরিক ও মিত্রদের জন্য সর্বোচ্চ ৭০টি আসন ছাড়তে রাজি।
গতকাল জাতীয় পার্টি ১১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে, যুক্তফ্রন্ট জমা দিয়েছে ৫১টি আসনে। তবে আওয়ামী লীগ তাদের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির জন্য সর্বোচ্চ ৪৪টি আসন দিতে চায়। আর নতুন যুক্ত হওয়া যুক্তফ্রন্টকে দিতে চায় ৫টি আসন। যদিও দল দুটোর চাহিদা আরও বেশি। তবে আওয়ামী লীগ উইনেবল প্রার্থী ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দিতে চাইছে না। সে ক্ষেত্রে দরকষাকষির মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর।
এদিকে জাপা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তার ১৭টি চাইছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাতীয় পার্টি প্রথমে ১০০টি আসন চেয়েছিল। পরে সেটি কমিয়ে ৭৬টি করা হয়, এরপর নামে ৫১টিতে। পরে সেখান থেকেও ছাড় দিয়ে ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। তবে এ ৪৭টি আসনের ১৭টিতে আওয়ামী লীগও প্রার্থী দিয়েছে।
সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর গঠন হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সাত দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করলেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনৈক্য তৈরি হয়েছে জোটটিতে। দফায় দফায় বসেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো আলাদা আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২৪০ আসন নিজেদের জন্য রাখছে দলটি। বাকি ৬০টি আসন ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া হয়েছে ২৫টি আসন। ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিক বিজেপি, খেলাফত মজলিস, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, এনপিপি, লেবার পার্টি ও সাম্যবাদী দলকেও আসন দেওয়া হচ্ছে। আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট না হলেও কমপক্ষে ১৫টি আসনে জোটের শরিকরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর জন্য ২০টির কাছাকাছি আসন রাখা হয়েছে। তবে এ দলগুলোর চাহিদা ১৪০টি আসন। দুই জোট মিলিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে বিএনপিকে।
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দল নাগরিক ঐক্য ৯টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। জেএসডি জমা দিয়েছে ৫১টি আসনে। গণফোরাম ৪০টির মতো আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগও বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বিএনপিপ্রধান দ্ইু জোটের পক্ষে ৮শ’র কাছাকাছি নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে বিএনপির তিন হেভিওয়েট প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা গেছে, আলাল ও সোহেল তাদের প্রত্যাশিত আসনে মনোনয়ন না পাওয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দেননি।