ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেগুন শসায় সেঞ্চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৪১ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৮

পবিত্র মাহে রমজান শুরুর আগেই নাগালের বাইরে চলে যায় রাজধানীর কাঁচাবাজার। হু হু করে বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। আজ মাহে রমজানের দ্বিতীয় দিন। ইতোমধ্যেই ১০০ টাকা ছুঁয়েছে বেগুন, শসা ও গাজরের কেজি। দোকানিরা বলছেন, রোজা থাকা অবস্থায় এ তিনটি সবজির দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম। রমজান মাস শেষে হয়তো দাম কিছুটা কমতে পারে।

তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেছিল, এবার রোজায় বাজারে প্রভাব পড়বে না। নিত্যপণ্যের দাম তেমন একটা বাড়বে না। কারণ, বাজারে তাদের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে। কিন্তু তাদের সে বক্তব্য কোনো কাজেই এলো না। গত সপ্তাহে তারা যখন বাজার বিষয়ে বক্তব্য দেন, সংবাদ সম্মেলন করেন, তারপর থেকেই বাজার অগ্নিরূপ ধারণ করে। হু হু করে বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। আর এখন ৫০ টাকার নিচে (প্রতি কেজি) কোনো সবজিই মিলছে না। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ভুক্তভোগী ক্রেতাদের অনেককে দোকানির সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্তৃক্ষের অভিযান চালানোর কোনো বিকল্প নেই। ভোক্তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার পেছনে বড় কারণ কয়েক ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার চিন্তা। এর বাইরে রয়েছে সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা। এগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও তারা ব্যবস্থা নিতে প্রতিবছরই ব্যর্থ হয়ে আসছে। এ ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতাও নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে দোকানিরা বলছেন, তাদের কিছুই করার নেই। আড়ত থেকে তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামেই।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বেগুন, শসা ও গাজরের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইফতারিতে বেগুনি, শসা ও গাজরের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। বিশেষ করে মুড়ি মাখাতে শসার বিকল্প নেই। আর ইফতারিতে মুড়ি মাখানো খান না-এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ও মানভেদে বেগুনের কেজি ৯০-১০০ টাকা, শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ খানেক আগেও এ তিনটি সবজি কেজি ৫০ টাকার মধ্যে মিলেছে। শান্তিনগর বাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা শসার কেজি বিক্রি করছেন ৯০-১০০ টাকা করে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে সেগুনবাগিচা বাজারেও। তবে রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা এর থেকে একটু কম দামে বিক্রি করছেন। এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ৮০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন শসা। শান্তিনগরের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আড়তে দাম চড়া। তাই আমাদেরও চড়া দামে শসা বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা কম দামে কিনতে পারলে ক্রেতাদের কম দামে দিতে পারব।’ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেমন বেড়েছে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে শসা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ১০০ টাকা। সে হিসাবে শসার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর গাজর গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৭০ টাকা। এখন ৯০ টাকা বিক্রি করছি।’ এদিকে গত কয়েক সপ্তাহের মতো সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে টমেটো, লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, পটোল, ঢেঁড়শ, বরবটির সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে দাম চড়া। সবজির এ চড়া দামের ক্ষেত্রেও রোজাকে কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম একই রয়েছে। বেগুন আগের মতো ৯০-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। কাঁকরোলের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। দুই মাস ধরে বাজারে দামি সবজির তালিকায় থাকা কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটোলের দাম কিছুটা বেড়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বরবটি ও ঢেঁড়শ। এ দুটি সবজি আগের সপ্তাহের মতো ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে পাকা টমেটো ও করলার দাম নতুন করে কিছুটা বেড়েছে। ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকা। দাম বেড়েছে সব ধরনের শাকেও। লাল শাক, সবুজ ডাঁটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আঁটি, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫-১০ টাকা আঁটি। আর ২০-২৫ টাকা আঁটি বিক্রি হওয়া পুইশাক ও লাউ শাক বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। কাঁচামরিচের দাম কিছুটা বেড়ে ১৫-২০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০-১৫ টাকা পোয়া। দেশি পিয়াজ আগের সপ্তাহের মতো ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি। ব্যবসায়ী বেলাল বলেন, রোজার কারণেই এখন সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা বেশি। রোজা চলে গেলে হয়তো সব সবজির দাম কমে যাবে। শসা ও বেগুনের দাম রোজার পর অবশ্যই কমবে। তবে রোজার ভেতর এ দুটি পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

 
Electronic Paper